বগা লেকের অজানা রহস্য
ভ্রমন পিপাসুদের কাছে ভীষণ পরিচিতি বগা লেক। অবস্থিত বান্দারবনের রুমা উপজেলা থেকে ১৮ কি.মি. দূরে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৩০০০ কি.মি উপরে।
?বগালেকের নামকরনঃ
বগা লেক ঘিরে বসবাসকারী ‘বম’ উপজাতির মানুষেরা বিশ্বাস করেন, অনেক আগে এখানে ছোট ছোট বাচ্চাদের খেয়ে ফেলা ড্রাগন বাস করতো। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে গ্রামের লোকেরা ড্রাগনকে হত্যা করলে ড্রাগনের মুখ থেকে প্রচণ্ড আগুন বের হয়ে পাহাড়কে বিস্ফোরিত করে আর তা থেকেই জন্ম নেয় এই লেক। বম ভাষার শব্দ বগা অর্থ ড্রাগন।
☞জানা যাক রহস্যঃ
প্রাচীন এক সময়ে সেখানে আসলে একটি চোঙাকৃতির বিশাল পাহাড় ছিল। সবকিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল। তবে হঠাৎ করে একদিন পাহাড়ের পাসের গ্রামগুলো থেকে গরু, ছাগল থেকে শুরু করে এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারাও হারিয়ে যেতে থাকলো। অনেক খোঁজাখুঁজি করে জানা গেল, বাচ্চাগুলোর ও গরুছাগলের সর্বশেষ পায়ের ছাপ রয়েছে ঐ পাহাড়ে। তখন সবাই ধারণা করতে শুরু করলো, নিশ্চয়ই ভয়ংকর কিছু একটি রয়েছে ঐ পাহাড়ের কোলে, আর সেটারই আক্রমণের শিকার হচ্ছে নিরীহ এই প্রাণী আর বাচ্চারা। একদল সাহসী যুবকদের আসল রহস্য উদঘাটন করতে দায়িত্ব দেয়া হয়। অনেক অনুসন্ধান করতে করতে পাহাড়ের মাথায় উঠে দেখতে পেল সেখানে একটি গুহায় আস্তানা গেড়েছে এক মস্ত বড় ড্রাগন। তাদের আর বুঝতে বাকি থাকলো না যে এতগুলো প্রাণী ও বাচ্চাগুলোর হারিয়ে যাওয়ার পিছনে এই ড্রাগনেরই হাত রয়েছে।গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নিল যে, যে করেই হোক এই ড্রাগনকে মেরে ফেলতে হবে। তারা বেছে বেছে সাহসী তরুণদের নিয়ে একটি দল তৈরি করলো। তীর, ধনুক, বল্লম, লাঠি আর মশাল নিয়ে রাতের অন্ধকারে তারা হানা দিল গুহায়। গুহার মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মানুষের রক্ত আর হাড়গোড় দেখে তারা বুঝে নিল কী ঘটেছে। একসঙ্গে তারা সেই ড্রাগন অর্থাৎ বগার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। তুমুল যুদ্ধ হল দুই পক্ষের মধ্যে। লড়তে লড়তে বগার প্রাণবায়ু যখন প্রায় শেষ, তখন বগা তার মুখ থেকে আগুনের শিখা ছুঁড়ে মারে গ্রামবাসীর দিকে। সেই আগুন পুরো পাহাড়কে গ্রাস করে ফেলে। বিস্ফোরিত হতে শুরু করে চারিদিক। শুরু হয় ভূমিকম্প। ভূমিকম্পে সেই পাহাড়টি ভেঙে তৈরি হয় এক বিশাল গর্তের। সময়ের পরিক্রমায় সেই বিশাল গর্তটিই আজ আমাদের কাছে ‘বগা লেক’ নামে পরিচিত।
তবে এই পৌরাণিক কাহিনী মানতে নারাজ ভূতাত্বিকদের মতে, বগা লেক মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের কারণে এর সৃষ্টি।
বগা লেক-এর পানি অম্লধর্মী। জলজ প্রাণী গুলোকে এখানে প্রতিকূলতার সাথেই বেঁচে থাকতে হয় । বাইরের কোনো পানি এখানে ঢুকতেও পারে না, আবার এর আশপাশে নেই পানির কোনো দৃশ্যমান উৎস। তবে এটির ব্যাখাও দিয়েছেন ভূত্বাতিকরা।
এখনো পযন্ত এটির গভীরতা নির্ণয় সম্ভব হয়নি। ভূত্বাতিকদের মতে বগা লেক এর নিচে একটি ঝর্ণা রয়েছে যার কারনে বিভিন্ন সময়ে তার পানির রঙের পরিবর্তন হতে পারে। তবে এখনো পযন্ত তা প্রমাণ হয়নি।
আল শাহারিয়া ইমন
Comments (1)