🔸 বইয়ের নাম : বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভায়
🔸লেখক নাম : মফিজ চৌধুরী
🔸প্রকাশনী : ইউপিএল
🔸পৃষ্ঠা : ১২৭
জাতিসংঘে যাত্রা শুরু হলো আমাদের। প্রথম দফায় দিল্লী যাওয়া অপরিহার্য হয়ে উঠল, কারণ আমেরিকার ভিসা নিতে হবে দিল্লির মার্কিন দুতাবাস থেকে, দিল্লি গিয়ে আমরা লোদী হোটেলে উ... more#বুকরিভিউ
🔸 বইয়ের নাম : বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভায়
🔸লেখক নাম : মফিজ চৌধুরী
🔸প্রকাশনী : ইউপিএল
🔸পৃষ্ঠা : ১২৭
জাতিসংঘে যাত্রা শুরু হলো আমাদের। প্রথম দফায় দিল্লী যাওয়া অপরিহার্য হয়ে উঠল, কারণ আমেরিকার ভিসা নিতে হবে দিল্লির মার্কিন দুতাবাস থেকে, দিল্লি গিয়ে আমরা লোদী হোটেলে উঠলাম। পরদিন সকালে সবাই মিলে আমেরিকার দূতাবাসে গেলাম ভিসার জন্য।
কলকাতা থাকতেই খবর পেলাম যে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে ভিসা দেওয়া হবে না।কিন্তু অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ খুররম খান পন্নীর যুক্তির কাছে পরাস্ত হয়ে সবাইকে ভিসা দিয়েছিল। যুক্তিটি ছিলো জাতিসংঘের প্রগ্রামে যোগদান করতে যাবে তাই ভিসা দরকার নাহলে আমেরিকার ভিসা নেওয়ার প্রশ্নই আসত না।
নিউইয়র্কে আমরা প্রথমে পিকউইক আর্মস হোটেলে উঠলাম সবচেয়ে সস্তা এবং জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে নিকটে অবস্থিত বলেই,যারাই আমাদের তদারক তদ্বির করেছিলেন তারা এই হোটেল বেচে নেন।
পাকিস্তান পক্ষে ত্যাগ কারী বাঙালিরা আমাদের রিসিভ করেছিলেন, তারমধ্যে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর খান এবং ফারুকল ইসলাম প্রমুখ।
বইটি প্রায় সমান দুইভাগে ভাগ করা, বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায়।বইটির সূচনা হয়েছে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের সানন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির বর্ননা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রী নিয়ে কিছু বছর যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যাপনা করেন, পরে আমলা হিসাবে পাকিস্তানে চাকরি করেন এবং বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবাদে চাকরি ছেড়ে দিয়ে শিল্প উদ্যোক্তা হলেন, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন, ৭০ এর নির্বাচনে আকস্মিক আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন এবং বিজয়ী হয়েছেন।তার পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন হিসাবে যে ভূমিকা পালন করেছেন তার বর্ননা করেছেন।
বইটির দ্বিতীয় অংশে বর্ননা রয়েছে শেখ মুজিবের কাছ থেকে আকস্মিক ভাবে মন্ত্রীসভায় যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ এবং বিধ্বস্ত দেশ পুর্নগঠনের নানান উদ্যোগ, সেইগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতা ,ক্ষেত্র বিশেষ মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার সাথে পরিস্থিতির অসঙ্গতি এবং মন্ত্রীসভার অভ্যন্তরে বিভিন্নমুখী প্রবনতা। অন্তরঙ্গ বিবরনে মিলবে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের ,জটিলতা গুলো কিভাবে দানা বেধেঁছিল।সেই বিষয়ে লেখকের ব্যক্তিগত ভাষ্য পাওয়া যাবে। লেখক প্রাকৃতিক সম্পদ , বিজ্ঞান ,কারিগরি গবেষণা ও আণবিক শক্তি বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে ছিলেন।পরে বিভিন্ন কারণে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেন, ওই সময় নয়জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
নয়জন মন্ত্রীর পদত্যাগ
গতকাল রবিবার ৬ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ৩ জন্য প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ পত্র পেশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ক্রমে রাষ্ট্রপতি তাহাদের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া সরকারীভাবে ঘোষণা করা হইয়াছে।
ভূমিকা:
"ফাঁসির মঞ্চে যাবার সময়ও আমি বলে যাব আমি বাঙালি,আমার ভাষা বাংলা
আমার দেশ বাংলাদেশ!"
-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব
বঙ্গবন্ধুর এই অমর বাণী শুনেই বোঝা যায় বাঙালি ও বাংলাদেশের সাথে তাঁর সম্পর্কের নিবিড়তা। ব্যক্তিগত ডায়েরীর পাতায় তিনি নিজ হাতে লিখেছেন-
"As a man,what concerns mankind concerns me.As a Bangalee, I am deeply involved in all that concerns Bangladesh.(বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত নোটবুকের অংশবিশেষ,৩রা মে,১৯৭৩)
বঙ্গবন্ধু বাঙালি ও বাংলাদেশ এ শব্দত্রয় এক সূত্রে গাঁথা।
তিনি বাঙালির অন্ধকার সমুদ্রের পাঞ্জেরী, জাতীয় জীবনের ধ্রুবতারা। কবি ভীষ্মদেব চৌধুরীর ভাষায়-
"নদী ছলো ছলো নাম বহমান বাঁধ দিতে আসে কে?
বাতাস বৈরী গুমোট হাওয়া তবু গাবো তার জয়
ফুলের জলসা তোমার জন্য রক্ষিত আছে পিতা
জয়বাংলার বঙ্গবন্ধু অবিনাশী অক্ষয়!"
বঙ্গবন্ধু , বাঙালি ও বাংলাদেশ:
বিশ্বের ইতিহাস বিনির্মাণে প্রতি যুগে যুগে কিছু মানুষ কালোত্তীর্ণ হয়ে এসেছেন। রাশিয়ার লেনিন, ভিয়েতনামের হো চি মিন, চীনের মাও সেতু, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ত্রো। আর বাংলাদেশের ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ জন্ম নেওয়া বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শৈশবেই চাল উঠিয়ে গরীব ছাত্রদের বই এবং পরীক্ষার খরচ বহন করা,বর্ষায় বন্ধুকে নিজের ছাতা কিংবা শীতের সময় নিজের চাদর খুলে দেওয়া, মাত্র ১২ বছর বয়সেই মুখ্যমন্ত্রীর সামনে স্কুলের ছাদ সংস্কারের প্রতিবাদ করা টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়াগায়ের সেই ছেলেটির মনেই ক্রমে অঙ্কিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র, প্রোথিত হয় বাঙালি জাতীয়বাদের চেতনা-
"My bengal of gold
I love you"
স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই পেয়েছি। তাইতো বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ এক অবিচ্ছেদ্য সত্তা।
'৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু:
১৯৪৮ সালে গঠিত 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' এর সাথে যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালনের সময় তিনি গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারীতে তিনি কারাগারে নিরাপত্তা আইনে বন্দী অবস্থায় ‘বাংলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদে’র মোহাম্মদ তোয়াহা ও অলি আহাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ২১ ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ বলে পালন করা হবে, আর, তিনি জেল থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে অনশন করেন এবং ২১ শে ফেব্রুয়ারী মিছিলে গুলি চালানোর প্রতিবাদ করেন।
'৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও বঙ্গবন্ধু:
বঙ্গবন্ধু '৫৪ এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার মন্ত্রীত্ব লাভ করেন।
'৬৬ এর ৬ দফা ও বঙ্গবন্ধু:
১৯৬৬ এর ফেব্রুয়ারীতে লাহোরে বিরোধী দল সমূহের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের দাবী সম্বলিত ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন, যা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ।শেখ মুজিব এই দাবিকে আমাদের বাঁচার দাবী শিরোনামে প্রচার করেছিলেন। এই দাবির মূল বিষয় ছিল একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত পাকিস্তানী ফেডারেশনে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন।সাংবাদিক ওবায়েদ উল হক ৬ দফাকে "Birth Certificate written in Advance" বলে যথার্থই বলেছেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও বঙ্গবন্ধু:
স্বায়ত্বশাসনের দাবীকে চিরতরে নস্যাৎ করে দেবার লক্ষ্যে পাকিস্তানী শাসকগণ ১৯৬৮ এর জানুয়ারী মাসে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রদ্রোহী প্রমাণ করে রাজনীতি থেকে উৎখাত করতে তিনিসহ আরো ৩৪ জন বাঙালি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
'৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান- ১১ দফা ও বঙ্গবন্ধু:
বাঙালির বিরুদ্ধে আইয়ুবের নিপীড়ন ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা জনগণকে আরো বিক্ষুব্ধ করে দেয়, গড়ে ওঠে প্রবল গণআন্দোলন। "জেলের তালা ভাঙব,শেখ মুজিবকে আনব" ছাত্র জনতার প্রকম্পিত স্লোগানে আইয়ুব সরকার মামলা প্রত্যাহার করে সকলকে বিনাশর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হন।
শেখ মুজিব কিংবদন্তি নায়কের মতো কারাগার থেকে নিঃশর্ত মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসেন। পরদিন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে গণমানুষের পক্ষে তাঁর সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এই সভা উপস্থিত লাখ লাখ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ নাম ঘোষণা করে।
বাংলাদেশ নামকরণ ও বঙ্গবন্ধু:
৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মরণ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু এ ভূখন্ডের নামকরণ করেন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু বলেন- “এক সময়ে এ দেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে... একমাত্র ‘বঙ্গোপসাগর’ ছাড়া কোন কিছুর নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই.... আমি ঘোষণা করিতেছি আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম হইবে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধু ‘বাংলাদেশ'"
'৭০ এর নির্বাচন ও বঙ্গবন্ধু:
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন।
অসহযোগ আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু:
নির্বাচনে বিজয়ের পরও পশ্চিমা সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে, এসময় বঙ্গবন্ধু ৭১ এর ২ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে ইয়াহিয়া সরকারকে কার্যত অচল করে দেন।সারাদেশ পরিচালিত হতে থাকে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায়।
'৭ই মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু:
৭ ই মার্চে রেসকোর্সে লক্ষ জনতার সামনে দাঁড়িয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি-
-"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
"রক্ত যখন দিয়েছে, রক্ত আরো দেবো
এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো
ইনশাল্লাহ"
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বলেছিলেন, "পৃথিবীতে মানুষ যত দিন পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে, ৭ মার্চের ভাষণ প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।"
রেসকোর্সে ঐতিহাসিক ১৮ মিনিট ১১ সেকেন্ডের ভাষণে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন পরিস্থিতির প্রেক্ষি আলোচনা করে বাঙালি জাতিকে দেশ রক্ষায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মূলমন্ত্র শুনিয়ে যান, সেই দুর্যোগের ঘনঘটায় শুনিয়ে যান বিজয় জাগরণী গান। জসীম উদ্ দীনের ভাষায়-
"মুজিবুর রহমান
ঐ নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি উগারিবান।"
স্বাধীনতার ঘোষণা ও বঙ্গবন্ধু:
"মাটি চাই, মানুষ নয়"
এই মূলনীতির আলোকে পাক হানাদার বাহিনী ২৫ শে মার্চ কালরাত্রিতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তান। গ্রেফতারের পূর্বেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়ে যান।২৫ শে মার্চ রাত ১২:২০ মিনিটে ঘোষণা করেন-
"This may be my last message, from today,Bangladesh is independent.I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you,to resist the army of occupation to the last your fight must go on until the last soldier of Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh.Final victory is ours."
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ…
মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস ও বঙ্গবন্ধু:
প্রথম একমাস বিক্ষিপ্ত ভাবে যুদ্ধ চললেও এপ্রিলে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরীগণ বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে গড়ে তোলে মুজিবনগর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার।দীর্ঘ নয়মাসের যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বলীয়ান মুজিব বাহিনী সহ বাংলার দামাল সন্তানেরা নিয়ে আসে স্বাধীনতার সূর্য। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।
আবুল ফজল বলেন-
"অনুপস্থিত সেনাপতির এমন সেনাপতিত্ব সত্যিই অভিনব, ইতিহাসে এমন নজির বিরল"
স্বাধীন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু:
১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারী দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু হাল ধরেন যুদ্ধবিধ্বস্ত এই বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্বের ১০৪ টি দেশ প্রবল গণবিস্ফোরণের পরেও স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭২ এর ১৪ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের নতুন সংবিধান গৃহিত হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন।
প্রশাসনিক ব্যবস্থার পূণর্গঠন,এক কোটি মানুষের পুনর্বাসন,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন,শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ,শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত বিনামূল্যে ও মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত নামমাত্র মূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ,মদ-জুয়া-ঘোড়দৌড়সহ সমস্ত ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড কার্যত নিষিদ্ধকরণ,ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড পুণর্গঠন, ১১,০০০ প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ ৪০,০০০ প্রাথমিক স্কুল সরকারিকরণ,দুঃস্থ মহিলাদের কল্যাণের জন্য নারী-পুনর্বাসন সংস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন,২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ, বিনামূল্যে/স্বল্প মূল্যে কৃষকদের মধ্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ,পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত ব্যাংক-বীমা ও ৫৮০টি শিল্প ইউনিটের জাতীয়করণ ও চালু করার মাধ্যমে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান, ঘোড়াশাল সার কারখানা, আশুগঞ্জ কমপ্লেক্সের প্রাথমিক কাজও অন্যান্য নতুন শিল্প স্থাপনসহ অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলার পরিকল্পনা করে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ৩ বছরেই স্বপ্নের সোনার বাংলার প্রয়াস চালান। তাঁর অনস্বীকার্য কীর্তিই তাঁর নাম বাংলার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত করে। তাই তো বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু অক্ষয়, ধ্রুবতারার মত অম্লান গরিমায় ভাস্বর। কবির ভাষায়-
"তোমাকে হারিয়ে
আমরা সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়া ছায়ারই মতো
হয়ে যাচ্ছিলাম,
আমাদের দিনগুলি ঢেকে যাচ্ছিলো শোকের পোশাকে,
তোমার বিচ্ছেদের সঙ্কটের দিনে
আমরা নিজেদের ধক্ষংসস্তূপে ব’সে বিলাপে ক্রন্দনে আকাশকে ব্যথিত
করে তুলেছিলাম ক্রমাগত; তুমি সেই বিলাপকে
রূপান্তরিত করেছো জীবনের স্তুতিগানে, কেঁননা জেনেছি
জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি।"
-শামসুর রাহমান(ধন্য সেই পুরুষ)
'৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা ও বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়ার কালো অধ্যায়:
ডেভিড ফ্রস্টের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- "They have given everything for me, because I was ready to give everything for them"
বঙ্গবন্ধু হয়তো স্বপ্নেও ভাবেন নি পাকিস্তানিরা যা করেনি বিশ্বাসঘাতক কতিপয় বাঙালি তা করবে। পাকিস্তানি মতাদর্শের অনুসারী দেশকে বিকিয়ে দেওয়া কিছু বিশ্বাসঘাতক ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘটায় বাংলাদেশের ইতিহাসের নৃসংশতম হত্যাকাণ্ড, নির্মম জল্লাদের মত রাতের অন্ধকারে সপরিবারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুকে। সেদিন বঙ্গবন্ধুর শারীরিক মৃত্যু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন এদেশের প্রতিটি ধূলিকণায়। অন্নদাশংকর রায় যথার্থই বলেছেন-
"যতকাল রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।"
উপসংহার:
বঙ্গবন্ধু এক আকাশ তিমির ভেদ করে বাঙালি জাতিকে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতার লাল সূর্য, এক মুক্ত আবাসভূমি বাংলাদেশ, পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন রঙে এঁকে গেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব!
তাই তো তিনি অমর, মৃত্যুঞ্জয়। কবি সুফিয়া কামালের ভাষায়-
"তোমার তো মৃত্যু নেই। এই বাংলাদেশ
তোমার স্বপ্নে সৃষ্টি মধুর আবেশ
বিতরি সৌরভ
ভরিয়া দিয়াছ চিত্ত, মোদের গৌরব।"
তথ্যসূত্র:
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী
জাতিরাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু-আনু মাহমুদ
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী-মোঃ আবুল কালাম আজাদ
উইকিপিডিয়া
বাংলাপিডিয়া
"বিজয় দিবস কন্টেন্ট রাইটিং বা ব্লগ কনটেস্ট"নাম: সাবরিনা মনসুরপ্রতিষ্ঠান: ঢাকা মেডিকেল কলেজই -মেইল: sabrinamonsurdmc32@gmail.comব্লগ টপিক: বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও বাংলাদেশ#InspiringBangladesh#inspiring...