'বিজয় দিবস কনটেন্ট রাইটিং বা ব্লগ কনটেস্ট'
নামঃ জান্নাতুল মাওয়া শাহারিয়া
প্রতিষ্ঠানঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইলঃ jannatulmouya3399@gmail.com
ব্লগ টপিকঃ তরুণদের চোখে ১৯৭১
'বিজয়'?সাধারণভাবে ভাবলে হয়তো তিন অক্ষরের একটি শব্দ;কিন্তু যদি একটু গভীরভাবে ভেবে দেখি তবে? এই তিন অক্ষরের 'বিজয়' শব্দটির গভীরতা এতোটা তীব্র বলেই আজ কোনোপ্রকার ভয় কিংবা সংকোচ ছাড়াই গর্বের সহীত বাংলা ভাষায় লিখতে পারছি। আজ দেশের প্রতিটি কোণায় লাল সবুজের পতাকা উড়তে কোনো বাধা নেই কিংবা আজ মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলতে ভীত হতে হয় না বাঙ্গালীকে। বিজয় শব্দটির সাথে যেমন জড়িয়ে রয়েছে উল্লাস,আবেগ,নিজস্বতা,বীরত্বগাথা;ঠিক তেমনি রয়েছে বহু স্বজন হারানোর গল্প,সম্ভ্রমহানির অনুচ্চারিত কাহিনী যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন।
এই যে স্বাধীনতা তা কি একদিনে অর্জন সম্ভব হয়েছে?উঁহু! ১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধের বিনিময়ে এই বিজয়।শুধু কি নয়মাস? না তো!১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্র বিভক্তির পর থেকেই তো শুরু হয় বাঙ্গালী জাতির উপর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকদের নির্যাতন। খুব কম বই ই আমার বারবার পড়া হয়েছে।তার মাঝে আনিসুল হকের 'মা' বইটি একটি। এই বইটি এমন একটি বই যা পড়ে আমি বারবার কেঁদেছি ; নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছি মানুষের মতো হলেই কি মানুষ হওয়া যায়? হয়তো না! আর ঠিক এইজন্যই হয়তো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙ্গালীর উপর নির্মম অত্যাচার করতে একটুও দ্বিধাবোধ করে নি।
-"মা কী করব? এরা খুব মারে। সবার নাম বলে দিতে বলে।"
আজাদ এভাবেই পাকিস্তানি শোষকদের হাতে বন্দী হয়ে মাকে তার কষ্টের কথা বলছিলো। আর সেই সাহসী মা,হাজারো দেশপ্রেমী মায়ের মতো আজাদকে বলেছিলো,
-"বাবারে, যখন মারবে তুমি শক্ত হয়ে থেকো, সহ্য করো। কারো নাম যেন বলে দিও না।"
আমি নিজের চোখে যুদ্ধ দেখি নি। হয়তো বাবার কাছে শুনে কিছুটা জেনেছি, কখনও বই পড়ে কল্পনা করতে গিয়ে ভীত হয়েছি। কখনও বা শুক্রবারে বিটিভিতে 'আমার বন্ধু রাশেদ' দেখে রাশেদের মতো হতে চেয়েছি। ছোটোবেলায় আমার ছোটো ভাই প্রশ্ন করতো, ' আচ্ছা আপু,যদি তুমি মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতে, তাহলে কি তুমিও যুদ্ধ করার সাহস করতে?' আসলেই কি করতাম? কতটুকু সাহস থাকলে নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে বেশি ভালো বাসা যায়? কতটা সাহসী হলে মা তার সন্তানকে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে পাঠায়?
যতবারই মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো শুনেছি বা জেনেছি ততবারই কল্পনা করেছি সেই সকল সাহসী বীরদের কথা। সেই সকল বীর বাঙ্গালী যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমি স্বাধীন, আমরা স্বাধীন। তাদের ত্যাগের বিনিময়েই স্কুলের প্রতিটি সকাল শুরু হয়েছিলো 'আমার সোনার বাংলা;আমি তোমায় ভালোবাসি' দিয়ে। কেও গুলির ভয় দেখায় নি,কারও ভয়ে লুকিয়ে বাংলা ভাষা উচ্চারণ করতে হয় নি।কন্ঠে ছিলো সাহস,কন্ঠে ছিলো বিজয়ের ছোঁয়া,কন্ঠে ছিলো উল্লাস এবং প্রাপ্তি।
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন -
সাবাস, বাংলাদেশ!এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়;
জ্বলে -পুড়ে-মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়।
Comments (0)