বিজয় দিবস উপলক্ষে বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা
নামঃ মোঃ তানভীর আহমেদ
প্রতিষ্ঠানঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া
ইমেইলঃ feeltanbir@gmail.com
বইঃ খেলাঘর
লেখকঃ মাহমুদুল হক
প্রারম্ভিকাঃ
খেলাঘর শব্দটির সাথে সবাই কমবেশি পরিচিত।শৈশবে বাড়ির আঙিনার ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে খেলাঘর সাজানো কিংবা মেলায় গিয়ে মাটির হাড়ি পাতিল কেনার বায়না কেইবা না ধরেছে।খেলাঘর সাজিয়ে সারাদিন খেলার পরে সন্ধ্যা বেলায় খেলনাপত্র গুছিয়ে ঘরে ফেরাই যেন ছিল শৈশবের সাথে মিশে থাকা অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। 'খেলাঘর' উপন্যাসে সেইরকম এক ঘর দেখতে পাই রাহেলা আর ইয়াকুবের।অল্প কিছুদিনের পরিচয়ে একসাথে থাকা, সময় ব্যবধানে আবার গুছিয়ে ঘরে ফেরার মতোই চলে যাওয়া।একই সাথে ফুটে উঠেছে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী।
ঔপন্যাসিক পরিচিতিঃ
মাহমুদুল হক বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও গল্পকার।তাঁর জন্ম তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে ১৯৪১ সালে। তিনি সাহিত্যিক প্রতিভার জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।২০০৮ সালের ২১ জুলাই মৃত্যুবরন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে 'খেলাঘর' তার অন্যতম একটি সৃষ্টি ।
উপন্যাস সম্পর্কিত তথ্যঃ
উপন্যাস-খেলাঘর
লেখক- মাহমুদুল হক
ধরন-মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস
রচনাকাল-১৪-২২ আগস্ট, ১৯৭৮
প্রকাশনী-সাহিত্য প্রকাশ
প্রথম প্রকাশ-এপ্রিল,১৯৮৮
মূল্য-১৫০ টাকা
ব্যক্তিগত রেটিং-৯.৯/১০
রিভিউঃ
উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ইয়াকুব,রাহেলা ও মুকুল।একটা দেশের যুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশি অসহায়ত্বের শিকার হন নারীরা। অসহায়ত্বের প্রতীক খেলাঘর উপন্যাসের রাহেলা। দেশের ক্রান্তিকালে দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সংগ্রামী চরিত্র মুকুল অর্থাৎ এক সাহসিকতার প্রতীক।মুকুল চরিত্রটি খুব স্পষ্ট — তার চোখ ভরা স্বপ্ন, বুক ভরা সাহস — দেশ স্বাধীন হবেই, গেরিলারা পাক-সেনাদের পরাজিত করবেই।
অন্যদিকে ইয়াকুব চরিত্রটি নিষ্ক্রিয়। দেশের জন্য ভাবনা কিংবা যুদ্ধে যাওয়া নিয়ে কোন চিন্তা নেই।তবে তার দেশপ্রেম আছে অথচ মনে করে “এই পরিস্থিতি চুপচাপ বসে থাকা ছাড়া আর কীইবা করার আছে।” এক পর্যায়ে তাকে বেশ দার্শনিকের মতো কথা বলতে শোনা যায়; খেলাঘরের অকুস্থল, পরিত্যাক্ত এক বাড়ি, আদিনাথের ভিটাকে নির্দেশ করে সে বলে, কেন যে মানুষ জায়গা-জমি করে, এখন এখানে বাতি জ্বালাবার কেউ নেই, ক’দিনরই বা সব ইত্যাদি।
রাহেলা আর ইয়াকুবের খেলাঘর গড়ে ওঠে আদিনাথের বাস্তুভিটায়। কিন্তু কীভাবে রাহেলা পৌঁছে ইয়াকুবের কাছে?
রাহেলা চরিত্রটি উপন্যাস জুড়ে দুর্বোধ্য। তার বাচনভঙ্গিও ব্যতিক্রম। যদিও উপন্যাসের শেষে এর কারন জানতে পাওয়া যায়।তবে কী ঘটেছিল রাহেলার সাথে?রাহেলার চলে যাওয়ায় কি ইয়াকুব বেদনাবোধ অনুভব করেছিল? সে কি চেয়েছিল তাদের খেলাঘর যেন ভেঙে না যায় নাকি চাননি রাহেলাকে আটকাতে?এই নিষ্ক্রিয় ইয়াকুব কি আসলে যুদ্ধে গিয়েছিল আর?
উপন্যাসটির আরেকটি বিষয় চোখে পড়ার মতো, চরিত্রগুলোর মধ্যকার রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আত্মীক সম্পর্ক ও মানবিকতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল একে অপরের বিপদকালে।
প্রিয় উক্তিঃ
★জীবনে প্রত্যাশা থাকতে নেই, প্রত্যাশা থাকলেই মার খেতে হয়।যা অযাচিত, তাই আনন্দের,তাই ঐশ্বর্য, জীবনে প্রত্যাশা থাকতে নেই। প্রত্যাশাই শয়তান!!
★একটা আচমকা ভুল সামলাতে গিয়ে যেন নতুন আরো দশটা ভুলের কারন ঘটিয়ে না ফেলি।
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে পরোক্ষ প্রেক্ষাপটে তুলে ধরেছেন মাহমুদুল হক।যুদ্ধে বাঙালির ঝাপিয়ে পড়া,বীরত্ব,রাজাকার ও পাকিস্তানিদের বর্বরতার বাইরেও যে ঘটনা মূল ঘটনাপ্রবাহের বাইরে থাকে,অন্তরালে থেকে যায় এই প্রেক্ষাপট এঁকেছেন মাহবুবুল হক।আরো দেখিয়েছেন যুদ্ধকালীন এক নারীর অসহায়ত্বের কাহিনী।একইরকম অসহায়ত্বের শিকার হন দেশের লক্ষ লক্ষ নারীরা।যার প্রতীক রাহেলা।সকলদিক বিবেচনায়,এটি একটি চমৎকার উপন্যাস।
সিদ্ধান্তঃ
উপন্যাসের কাহিনীকে সম্পূর্ণ উপলব্ধি করতে হলে, রিভিউ বর্ননায় রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাহিনীর উত্তর পেতে পাঠককে অনুরোধ করব উপন্যাসটি পড়ে ফেলতে।
Comments (0)