#বুক_রিভিউ
নাম:- সাইফা শান্তা
প্রতিষ্ঠান :- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ
ইমেইল :- nadiashanta3566@gmail.com
#বইয়ের নাম:- "অসমাপ্ত আত্মজীবনী"
লেখকের নাম:- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
লেখক পরিচিতি:-
----------------------------শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ.ডিগ্রি লাভ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর এই অর্জন স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম প্রেক্ষাপট রচনা করে।
১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতির আসনে অধিষ্ঠিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী সদস্যের হাতে তিনি নিহত হন।
বইটির ধরণ:-
----------------------বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" একটি জীবন কাহিনী ও ঘটে যাওয়া জীবনের প্রতিটি দিকের এক অবর্ণনীয় লিখা। যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লিখা শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ করতে পারেনি। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট,লেখকের বংশ পরিচয়,জন্ম,শৈশব,স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দুর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ,কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলীম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৪ সাল অবধি ঘটে যাওয়া বিষয়াবলী বইটিতে স্থান পেয়েছে। লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহা সহধর্মিণীর কথা,যিনি তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একইসঙ্গে লেখকের চীন,ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনা ও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে।
বইটির সংক্ষিপ্তসার:-
--------------------------------- অসমাপ্ত এই শব্দের অর্থটাই বহন করে অসম্পূর্ণ। শেষ হয়ে ও হইলোনা শেষ, "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" তে ও আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে শুরু করে কারাবন্দী জীবনে কাটিয়ে উঠা দুঃসহ নিঃসঙ্গ দিনগুলোর অভিপ্রেত বর্ণনা। কতোটা লড়াই ও দারিদ্র্যতার সাথে নিজেকে সকল প্রতিকূলতার মুখ থেকে শত বিপদে ঝাপ দিয়ে একের পর এক দুঃসাহসিক কাজ করেই গেছেন। যা মূলত এই বীরের পক্ষেই সম্ভব। কখনোই এই বীর আপোস করেন নাই। বরং বারংবার নিজের সর্বস্ব টা বিলিয়ে দিয়ে কিভাবে দেশরক্ষা করা যায়? কিভাবে সকলকে রক্ষা করা যায়? কিভাবেই বা অসাম্প্রদায়িকতা দূর করে সামপ্রদায়িকতা ফিরিয়ে আনা যায়,সেই সকল বিষয় নিয়েই তিনি চিরটাকাল সোচ্চার ছিলেন। ছোটবেলায় যখন রাজনীতি তে নাম দিয়ে নিজের সাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন, তখন প্রতিটি পদে পদেই বাঁধা আসতে শুরু করলো। কিন্তু থেমে যাইনি কখনো। প্রতিবাদ করার ফলে বরং তাকে জেল খাটতে হয়েছে অনেক বছর। তাও তিনি দমে যাননি। যতই বিপদগ্রস্ত ও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন ততোই যেন এই প্রতিবাদী বীর হয়ে উঠেছেন জ্বলন্ত এক অদম্য নাম। কি করেন নি তিনি? নিজের (১৯২০-১৯৭৫) এই ৫৫ বছর বয়সের মাঝে তিনি নিজেকে বা নিজের পরিবারকে ঠিক কতটুকু সময় দিয়েছেন? কিন্তু সময় দিয়েছেন রাজনীতিতে। হ্যা। যে রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন সেটা ছিলো দেশরক্ষার জন্য। মানুষকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য। হার না মেনে ন্যায়ের পক্ষে লড়ে যাওয়ার জন্য তিনি সময় দিয়েছেন। অথচ এই রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি ও তিনি পড়ালেখা, বা অন্যান্য কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেননি। বরং সবগুলোই ঠিক রেখে তিনি এগিয়ে গেছেন সমানতালে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে কত না না খেয়ে,টাকা বাঁচিয়ে, কতোটা দুঃসহ জীবনযাপন করে গেছেন শুধুমাত্র এই দেশটাকে স্বাধীন করার জন্য। সবাইকে তিনি যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল আর তার ডাকে যেভাবে মানুষ সাড়া দিয়েছিলো। মূলত এটা বঙ্গবন্ধুর দ্বারাই সম্ভব। ১৯৩৪-১৯৫৫ সাল পর্যায়ের ঘটে যাওয়া সকল ঘটনায় উঠে এসেছে বইটিতে। বাকি সময়টার বিষয়গুলো তিনি লিপিবদ্ধ করার মতো সেই সময়টুকু পাননি। তাই আজ ও এই ইতিহাসটি অসম্পূর্ণ ই রয়ে গেলো সবার কাছে। ১৯৩৬ সালে যখন প্রথম রাজনীতিতে পা বাড়ান,মনে আছে কি? কতোটা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তাকে প্রতিটি সময় কাটাতে হয়েছে। কতোটা ঝুঁকি নিয়ে কাজগুলো কে করতে হয়েছে। অথচ তার এই কাজগুলো এখনো আমাদের অনেকেরই অগোচরে রয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকে সবসময় তার সহধর্মিণী রেণু বলতেন,জীবনী টা বিশেষ করে রাজনৈতিক জীবনের কর্মকাণ্ড গুলো লিখে রাখতেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তেমন কর্ণপাত না করেই বলতো কি হবে লিখে রেখে আর? একটা সময় কারাবন্দী অবস্থায় লিখা শুরু করে দেন। তাও তা সম্পূর্ণ করা আর হয়ে উঠেনি। পরবর্তী তে শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বর্তমানে যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনার হাতে তার পিতার লিখা চারটি পাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে হস্তগত হয়। তখন বাকরুদ্ধ হয়ে তিনি শুরু করে দিন বাকি পাতাগুলো খুঁজে বের করার কাজে। সেই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহেনা বাবার এসব লিখা দেখে বেহুশ হয়ে যান। শেষ মুহূর্তে দুইবোন মিলে ও অনেকের সাহচর্যে এনে বহুকষ্টে সংগ্রহ করে ২০০০-২০১২ সাল অবধি একটু একটু করে প্রকাশ করে ফেলেন পিতার আত্মজীবনী। ২০১২ সালেই "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" প্রকাশিত হয়। তিলে তিলে গড়া বাবার এই দিয়ে যাওয়া স্বাধীন দেশ ও এতো দায়িত্বের ভার নিয়েই শেখ হাসিনার হাতে পিতার এই অমূল্য লিখা "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" বাহির হয়। যাতে কিছু পান্ডুলিপি ও সংরক্ষিত আছে।
আকর্ষণীয় কিছু দিক/ মন্তব্য/বাণী :-
------------------------------------------------------
১) যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করেনা তাদের ভুল ও হয়না।(৮০ পৃষ্ঠা)
২)যে ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা-মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত,তাদের মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নাই। আর যারা বাবা মায়ের স্নেহ আর আশীর্বাদ পায় তাদের মতো সৌভাগ্যবান কয়জন!(৮৭পৃষ্ঠা)
৩) কোন নেতা যদি অন্যায় কাজ করতে বলেন,তার প্রতিবাদ করা এবং তাকে বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা জনগণের আছে। (১০০পৃষ্ঠা)
৪) জনসাধারণ চলেছে পায়ে হেঁটে, আর আপনারা আদর্শ নিয়ে উড়োজাহাজে চলছেন। (১০৯পৃষ্ঠা)
৫) অযোগ্য নেতৃত্ব, নীতিহীন নেতা, ও কাপুরুষ রাজনীতিবিদদের সাথে কোনদিন একসাথে হয়ে দেশের কোন কাজ করতে নেই। তাতে দেশসেবার চেয়ে দেশের ও জনগণের সর্বনাশই বেশি হয়। (২৭৩পৃষ্ঠা).
অনুপ্রেরণা ও উল্লাসিত যে ক্ষণ:-
This may be my last message, from to day Bangladesh is independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved.
বইটি কেন পাঠ করা উচিত :-
---------------------------------------------রাজনীতি তে জড়িয়ে পড়া মানেই কি খারাপ? আর রাজনীতি মানেই কি সন্ত্রাস,চাঁদাবাজি, হামলা,অন্যায় এসব? বঙ্গবন্ধু কি এসব রাজনীতি আদৌ আশা করেছেন? বা এসব রাজনীতির কথা বলে গেছেন? রাজনীতি ও বঙ্গবন্ধু ও করেছেন,তবে তিনি কি অন্যায় করেছেন এতে,যে রাজনীতে তে তিনি বলিষ্ঠতার পরিচয় রেখে কাপুরুষের মতো লেজ গুটিয়ে পালিয়ে না এসে একের পর এক অতর্কিত হামলার কাছে পদানত না হয়ে বারংবার লড়েই গেছেন এমন রাজনীতি টা কি সত্যি অযৌক্তিক। মোটেই না, বরং বঙ্গবন্ধু কে বাহ্বা দিলে ও কম হয়ে যাবে। এমন আদর্শের মতো রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেন না। বইটি যারা রাজনীতি করে শুধু তাদের জন্য নয়।বরং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। জ্ঞানচক্ষু টাকে খুলে দিতে বঙ্গবন্ধুর এই "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" টাই পাঠ করে দেখুন না। কতোটা জানা হয় আর কতোটা মনে সংশয় থাকে। আশা করি নিজে অন্তত ঠকবেন না বইটি পড়ে। বরং এমন সব বিষয় গুলো জানতে পারবেন যে মনে হবে এতোদিন আপনি কোথায় ছিলেন পড়ে,আর আজকে যে আমরা অহংকার করছি স্বাধীন দেশকে নিয়ে সে স্বাধীন দেশটাকে পেতে কতোটা অগ্রনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু তার উত্তরটুকুর জন্য হলে ও বইটি পড়বেন। আর না হলে,স্বাধীনতা টাকে জানতে বা কিভাবে আজ অর্জিত এ স্বাধীনতা কতোটা ত্যাগের ফলে তার জন্য হলে ও বইটি পড়া উচিত বলে আমি মনে করি।
পাঠ প্রতিক্রিয়া :-
-------------------------- এতোদিন সবার মুখে শুনতাম বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর কথা। পড়ার একটা বিরাট শখ ছিলো। কখন পারব,জানবো,ইচ্ছে টা মিটাবো সেই আশায় বসে ছিলাম। একদিন এনে পড়া শুরুই করে দিলাম। আদৌ নিজেকে আবারো আবিষ্কার করলাম,কোথায় ছিলাম এতোদিন,ইতিহাস তো অনেক পড়েছি,তবে এই "অসমাপ্ত আত্মজীবনী " তে যে বিরাট এক বীরপুরুষের দুঃসহ বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে দেশকে মুক্ত করার ইতিহাস লুকিয়ে তা কল্পনা ও করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে লিখার সাধ্য আমার নেই। কম হয়ে যাবো যতই আমি এই নেতার গুণাবলি বলি না কেন? পরিশেষে এটাই বলার নিজেকে সত্যি আজকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি বইটি পড়ে। কার্যকরী ও সর্বকালের সেরা একটি বই ছিলো এটি। যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা দরকার।
ব্যক্তিগত অভিমত:-
-------------------------------২০১২ সালে বইটি প্রকাশ হওয়ার পর বেশ তো অনেক ভাষায় বইটির অনুবাদ হলো। আমার মতামত হলো শুধু অনুবাদেই নয়,বরং বিশ্বের কাছে মহান নেতাকে তুলে ধরতে বেশি বেশি গবেষণা করে পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা ও বিদেশে লাইব্রেরী গুলোতে বঙ্গবন্ধুর বিষয়গুলোকে স্থান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। তাতে পুরো বিশ্বের কাছেই তিনি এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ও নাম হয়ে মননে থাকবেন।
বইটির বিস্তারিত কিছু তথ্য :-
-------------------------------------------
বইয়ের নাম:- -------- "অসমাপ্ত আত্মজীবনী"
লেখকের নামঃ- -------- "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান "
সম্পাদনায়:- ---------- "বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা"
প্রকাশনায়:- ---------- "দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড "
প্রথম প্রকাশ:- ------জুন,২০১২।
প্রচ্ছদ :- ------------ সমর মজুমদার।
ISBN:- ----------978 984 506 195 7
Comments (0)