নাম : মো: নাফিস উল্লাহ
শ্রেণী: অষ্টম
বিদ্যালয় : গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা
ইমেইল: ullahnafis8@gmail.com
বিষয়: বিজয় দিবস বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা
#বুক_রিভিউ
?বইয়ের নাম: রাইফেল রোটি আওরাত
?লেখক: আনোয়ার পাশা
?প্রকাশনী: স্টুডেন্ট ওয়েজ
?ধরন: মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস
?পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১৮০
?পর্যালোচনা:
শহীদ আনোয়ার পাশা রচিত 'রাইফেল রোটি আওরাত' আমাদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম উপন্যাস। বাস্তব ও কাল্পনিক চরিত্রের মিশ্রণে ঔপন্যাসিক এখানে অসামান্য রচনাশৈলীর পরিচয় দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পৌঁছে দেয়ার জন্য একঘেঁয়ে বর্ণনা এতে নেই, বরং মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে রচিত এই বইটি তাদের মনে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। উপন্যাসের মূল চরিত্র ইংরেজির অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহীনের মাঝে পাঠকগণ লেখকের ছায়াই দেখতে পায়। ধর্মকে পুঁজি করে অন্যায়, অবিচার, নির্যাতনের শীর্ষে পৌঁছেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী; তাদের সাথে যোগ দেয় 'ঘরের শত্রু বিভীষণ'রুপী রাজাকাররা। এদের চরিত্রকে ব্যাঙ্গ করে লেখক বলেছেন রাইফেল, খাবার(রোটি) আর নারীর(আওরাত) প্রতি লালসা- এই তিনেই তাদের কথিত 'জেহাদ'। এ পাপের সত্যিই ক্ষমা নেই।
স্বল্প সময়ের রচনা এটি- ২৫শে মার্চ কালরাত থেকে এপ্রিলের প্রথমার্ধ পর্যন্ত। এর মাঝেই রয়েছে প্রতি মুহূর্তের উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা, মৃত্যুর হাতছানি। কাল্পনিক চিত্রশিল্পী আমনের হাহাকার, বা তার স্ত্রীর বুকে মাইন বেঁধে শত্রুসেনার ট্রাকের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়া, কিংবা সুদীপ্ত,ফিরোজের মতো অনেকের স্ত্রী, সন্তানসহ একের পর এক নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটোছুটি- এমন ছোটো ছোটো ঘটনাই সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকে চোখের সামনে তুলে ধরে। পুরো রচনাজুড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রভাব, তাঁর ৭ই মার্চের দৃপ্ত আহ্বানের প্রতি জনসাধারণের সাড়াদানের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
যে বাঙালি মৃত্যুকে ভয় করে না, কাছের মানুষকে বাঁচাতে নিজের জীবনদানে প্রস্তুত থাকে, তাদের কি দমিয়ে রাখা যায়? সেই ক্রান্তিকালে সব ভেদাভেদ ভুলে সকলের এক পরিচয়- আমরা বাঙালি, আমরা বাংলাদেশি। আমাদের উপর এমন অন্যায় কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। ঔপন্যাসিকের শেষ কথাতেই রয়েছে এই আশার বীজ "নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি প্রভাত। সে আর কত দূরে। বেশি দূর হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকু তো! মা ভৈঃ। কেটে যাবে।" হায়! তাঁর আশা পূরণ হলো ঠিকই, কিন্তু তিনি সেই বিজয় দেখে যেতে পারলেন না। ১৪ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ অসংখ্য বুদ্ধিজীবীর সাথে তাঁকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তবে তাঁর শহীদ আত্মার আকাঙ্ক্ষা ও চেতনাকে হত্যা করতে পারেনি পাকিস্তানি পিশাচরা; কেননা শিল্পীর বিনাশ আছে, শিল্পের নেই। তাঁর এই কালজয়ী উপন্যাস পড়ে সর্বস্তরের পাঠক অভিভূত হবেন বলে আমার বিশ্বাস!
Comments (0)