"ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ সামিট-২০২০ইং"
নাম:- সাইফা শান্তা
ইমেইল :- nadiashanta3566@gmail.com
মোবাইল নম্বর :- ০১৬৩১৩১২১১৫
রেফারেন্সকারী দলের নাম:- "বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা"
বিষয়:- বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে চিঠি লেখা প্রতিযোগিতা।
১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ইং
দারোগাবাড়ি,কুমিল্লা।
শ্রদ্ধাস্পদেষু পিতা,
প্রারম্ভেই লাল সবুজের ইতিবৃত্ত থেকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার আসন থেকে জানাই লাল সালাম।
শুরুতেই একটি বিখ্যাত উক্তির কথা স্মরণ করে বলতে চাই,"মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনোই জন্ম নিত না।"
সত্যি বলতে আজকের এই বাংলাদেশ যাকে আমরা স্বাধীন দেশ বলে বিশ্বে মাথা উঁচু করে বাঁচবার ও দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখি তার স্থপতি আপনিই জাতির পিতা। আপনি জন্ম না নিলে হয়তো আজকের এই বাংলাদেশকে ও আমরা পেতাম না স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অহংকার হিসেবে। আপনার রেখে যাওয়া অবদান ও নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা মুক্তিযুদ্ধের সেই দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা কি সত্যি ভোলা যায়?
আমি জানি না আদৌ আমার এই চিঠি টা আপনার নিকটতম হবে কি-না? তবে আমি এটা বিশ্বাস করি,আপনিই আমাদের জাতির পিতা যে কি-না মিশে আছে প্রতিটি বাঙালির সত্তায়, হৃদয়ে,মননে। সর্বগুণে গুণান্বিত এই বীরের কখনো মৃত্যু হতে পারে না। এই বাংলার ইতিহাস জুড়ে দীর্ঘ একশত বছর পরেও আপনার মতো শক্তিশালী, আত্মত্যাগী,লড়াকু,নেতৃত্ব প্রদানকারী বীরের দেখা পাওয়া প্রায় বিরল। একমাত্র আপনিই একজন ব্যক্তি যে কি-না স্বদেশের জন্য দীর্ঘ ন'মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সশরীরে উপস্থিত না থেকেও লড়াই চালিয়ে কিভাবে শত্রুদের পর্যদুস্ত করা যায় তার একজন মহানায়ক। কারাজীবনে থেকেও দিনের পর দিন বাঙ্গালিকে করে তুলেছেন অনুপ্রাণিত, শক্তিশালী যা আপনার নেপথ্যেই সম্ভব হয়েছে।
দেশ বিভাগের পরবর্তী ৫২'র ভাষা আন্দোলন,ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন, ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা, ৬৯'এর গণ-অভ্যুত্থান,৭০ এর নির্বাচন ও অবশেষে ৭১ এর বহুল প্রতীক্ষিত বিজয় এসবকিছুর মূল উপজীব্য ছিলেন আপনিই জাতির পিতা। আজকের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সেদিন ছিলো না। পরাধীনতার শেকল ভেঙে আপনিই দেশকে স্বাধীন করার জন্য আপামর বাঙালির মাঝে সেদিন উপস্থাপন করেছিলেন জ্বালাময়ী সেই ৭ই মার্চের ভাষণ, যা প্রতিটি বাঙ্গালিকে ঐক্যবদ্ধ করে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে সাহস,শক্তি ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। নিঃসন্দেহে ঐ ভাষণের তীব্র গতিতে প্রতিটি বাঙ্গালি হয়ে ওঠেছিল সোচ্চার।
আমি আজও সেই রাজপথ উত্তাল করা ভাষণটি শুনি,সবসময় ভাষণটি শুনে নিজেকে অন্যভাবে অনুপ্রাণিত করে তুলি। এইতো সেই বীর; কে বলেছে বঙ্গবন্ধু আর নেই? আমি তো বাংলার প্রতিটি কানায় কানায় বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধু মরে নাই,বঙ্গবন্ধু প্রতিটি প্রাণে মিশে আছে এক আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে।
এ বছরই আপনার জন্মশতবর্ষ পূরণ হলো ও তার কার্যক্রম ও শুরু হলো এক বছরের জন্য। আমাকে আজ ও একটা কথা জানান দিয়ে যায় কবিগুরুর ভাষ্যে, "ওই মহামানব আসে।/দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে/মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে.....এল মহাজন্মের লগ্ন। বাংলাদেশের মানুষের প্রাণে আপনি আজীবন রয়ে যাবেন এক অমর কৃতিত্ব হিসেবে যা কখনো আমাদের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেনা। একদিন বহির্বিশ্বের গোটা জাতি জানবে জাতির পিতার আদর্শ,ত্যাগ,সুদৃঢ় নেতৃত্বের কথা,স্বাধীন করার কৌশলের কথা ছেয়ে যাবে বাংলারূপ পেরিয়ে গোটা বিশ্বে।
পিতা আপনার কাছে আমার একটি অভিযোগ ছিলো,হয়তোবা আমার এই অভিযোগের উত্তর আমি কখনোই পাবো না। তবে অভিযোগটা পেশ করে আমি অনুভূতির এক রেখাপাতে আপনাকে জানাতে চাই। আমার অভিযোগের উত্তর আমি একদিন খুঁজে নিব আপনারই আদর্শে যদি উজ্জীবিত হয়ে নিজেকে গড়ে তোলা অব্ধি। আচ্ছা পিতা; নেতৃত্ব বলতে আপনি কি বুঝেন? নেতৃত্ব বলতে কি শুধু মলাটবদ্ধ রঙিন বইয়ের পাতায় সাদা পৃষ্ঠার মাঝে কালো ছাপা অক্ষরে লিখা পরিচালনা করা, অনুপ্রাণিত করা,দায়িত্ব পালন করা? এতটুকুই কি নেতৃত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ? তবে জাতির পিতা আপনি যে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে নেতৃত্ব পালন করেছেন সেই ছোট থেকে শুরু করে একটা দেশকে স্বাধীন করা অব্ধি; ঐটাকে ঠিক নেতৃত্ব বলা চলে কি? জাতির পিতা নেতৃত্ব বলতে কি নেতৃত্বের সংজ্ঞায় আমরা আপনার মতো বীরের পুরো ইতিহাসের একটা জ্বলন্ত উদাহরণ দিয়ে নেতৃত্ব পালন করতে পারি না? আজকালকার নেতৃত্বের সাথে আমি আপনার নেতৃত্বকে তুলনা করতে পারি না জাতির পিতা। এখনকার নেতৃত্ব কেবল বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ; আপনার নেতৃত্বের মতো কি আজকালকার নেতৃত্ব টা হতে পারেনা জাতির পিতা? এ মুহূর্তে আপনি উপস্থিত থাকলে ঠিকই আমার উত্তরটা পেয়ে যেতাম ও বাংলাদেশ ও সেই কবেই নেতৃত্বের সংজ্ঞাটা আয়ত্ত করতে পারতো। আমার অভিযোগ এটাই ছিলো জাতির পিতা,আপনার নেতৃত্ব ও এখনকার নেতৃত্বের মধ্যে আমি আকাশ-পাতাল ব্যবধান নিয়ে অভিযোগ টা রাখলাম।
আপনিই এমন একজন নেতা ছিলেন যে কি-না এই সবুজ-শ্যামল বাংলার স্থপতি,মুক্তিদাতা, উদার,অসাম্প্রদায়িক, সংস্কৃতিমনা আপোষহীন এক সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুমকোমল হৃদয়ের অধিকারী ও আজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার একজন আইডল। নিজের পরিবার, ছেলে-মেয়ে,স্ত্রী ছেড়ে যে কি-না দেশের জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিতে ছিলো শতভাগ প্রস্তুত। একটা কথা ভীষণ মনে পড়ছে জাতির পিতা আপনারই লিখা
"নতুন করে গড়ে উঠবে এই বাংলা,বাংলার মানুষ হাসবে,বাংলার মানুষ খেলবে, বাংলার মানুষ মুক্ত হয়ে বাস করবে,বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে। এই আমার সাধনা এই আমার জীবনের কাম্য,আমি যেন এই কথা চিন্তা করেই মরতে পারি এই আশীর্বাদ এই দোয়া আপনার আমাকে মারবেন।"
প্রতিটা কথাই আজ পূর্ণতা পেলো জাতির পিতা,সবই আজ হওয়ার মূলে আপনার বুদ্ধিদীপ্ত রণকৌশল কিন্তু সর্বোপরি আমরা হারিয়ে ফেললাম আপনার মতো একটি নক্ষত্রকে ১৯৭৫ সালের সেই বিভীষিকাময় ১৫ই আগস্টে। নরপিশাচরা বাঁচতে দেয়নি আপনায় জাতির পিতা,তাতে কি হয়েছে? কোটি জনতার হৃদয়ে এমন এক স্থানে আপনি আছেন জাতির পিতা ঐখান থেকে কোন নরপিশাচ আর আপনাকে কেঁড়ে নিতে পারবেনা। হিংস্র হায়েনাগুলো এই বাংলা থেকে আপনাকে আলাদা করতে পারবে না জাতির পিতা। আপনি এক ইতিহাস হয়েই বাঙ্গালির এক অভূতপূর্ব উদাহরণ হিসেবে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন সকলের মনেপ্রাণে।
তাইতো কবি কণ্ঠে বলা যায়:-
"যতদিন রবে পদ্মা,মেঘনা,যমুনা,গৌরি বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান"।
আপনি অমর হয়ে আছেন সম্মানের উঁচু এক শিখরে।
আপনাকে দেওয়ার মতো এখনো তেমন কিছুই অর্জন করতে পারিনি। তবে আপনার রেখে যাওয়া এই বিজয় নিশানকে রক্ষা করার ভার যাতে একদিন হাতে নিতে পারি আপনার আদর্শে আদর্শিত হয়ে সেই দোয়ার দরখাস্ত রাখলাম। বিজয় দিবসের ৪৯বছর পরেও বিজয়ে রূপান্তরিত স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্বে যাতে শামিল হতে পারি এটাই প্রত্যাশা।
পরিশেষে, আপনাকে উৎসর্গ করে আপনার লিখা একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়ে আমার স্বরচিত এ কবিতাটি উৎসর্গ করলাম জাতির পিতা। যার প্রতিটি লাইনের প্রথম অক্ষর থেকে শেষ অক্ষর অব্ধি গেলে আপনার বিখ্যাত উক্তিটি পাওয়া যাবে।
"আমি সব ত্যাগ করতে পারি,তোমাদের ভালোবাসা আমি ত্যাগ করতে পারিনা।"(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)
আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি,
মিশে আছে যিনি বাঙালির সত্তায়।
সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বীরের কথা বলছি,
বঙ্গবন্ধু নামক যিনি ইতিহাসের পাতায়।
ত্যাগী,প্রতিবাদী নেতার কথা বলছি,
গড়া এই অর্জিত সোনার বাংলায়।
কবির কলমে বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি,
রক্তক্ষয়ী ১৫ই আগস্ট যিনি প্রাণ হারায়
তেজী শক্তিতে বলীয়ানের কথা বলছি,
পারার অভীষ্ট তীব্রতা যার হাতে শুরু,
রিক্ততায় বজ্রকণ্ঠের কথা বলছি,
তোমার-আমার সকলের যিনি গুরু।
মাথা উঁচু করে যে বীরত্বের গুরু।
দেশমাতৃকার মহানায়কের কথা বলছি,
রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতার স্থপতি।
ভালোবাসার সুপুরুষের কথা বলছি,
লোকালয় জুড়ে যার অবদান বিস্তৃতি।
বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধুর কথা বলছি,
সার্বিক কর্মকাণ্ডের যিনি স্বপ্নদ্রষ্টা।
আমি বঙ্গবন্ধুর কথা বলছি,
মিশে থাকা স্বাধীনতার যিনি প্রতিষ্ঠাতা।
ত্যাগ-উপেক্ষিত নামের কথা বলছি,
গঠনে সংগ্রামী চেতনার মনোভাবী।
কণ্ঠে বজ্র বাণীর স্থপতির কথা বলছি,
রঙিন স্বাধীন বাংলার যে করেছে দাবী।
তেজস্বী সুরে অগ্রনায়কের কথা বলছি,
পালাক্রমে যে বী সর্বসেরার তালিকায়,
রিক্ততা মোড়ানো নামের কথা বলছি,
নামটি বঙ্গবন্ধু যিনি ইতিহাসের পাতায়।
~সাইফা শান্তা
ভালোবাসার ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা আপনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।
ইতি,
সাইফা শান্তা
#16th December
#49 years of victory
Comments (0)