#inspiringmillion #Bangladesh #StoryOfInspirations #Bangladesh #BijoyDibosh #nationalvictoryday #victoryday #16thDecember #49YearsOfVictory#team: বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধানামঃ মো.হাছিবুল বাসারপ্রতিষ্ঠানঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।বইয়ের নাম:- অসমাপ্ত আত্মজীবনীক্যাটাগরি:- আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থলেখকের নাম:-শেখ মুজিবুর রহমানপ্রকাশনী:- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডপ্রকাশক:- মহিউদ্দিন আহমেদপ্রথম প্রকাশ:- জুন, ২০১২পৃষ্ঠা:- ৩২৯মূল্য:-২২০ টাকা মাত্রISBN: 9789845061957লেখক পরিচিতি:সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতির জনক। অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ সজ্জিত নদী পাড়ের টুঙ্গিপাড়ার ঐতিহ্যবাহী মধ্যবিত্ত শেখ পরিবারে শেখ লুৎফুর রহমান ও সাহেরা খাতুনের ঘরে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেন বাঙ্গালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ ডিগ্রী লাভ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়ন করেন।মহান এ নেতা ছোটবেলা থেকে রাজনীতি ও দেশব্রতে আত্মনিয়োগ করেন। ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেন। ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে দেশব্যাপী সফরের মাধ্যমে মানুষের মনে বাঙালি জাতীয়তাবোধ ও রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি করেন। এছাড়া বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ হিসেবে পরিচিত ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। অমিত আত্মবিশ্বাস,রাজনৈতিক প্রজ্ঞা,প্রগতিশীল নেতৃত্ব, সাধারণের লালিত স্বপ্নের প্রতি অবিচল আস্থা, মানুষের সাথে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনমুখী চিন্তাধারার গুনাবলী বঙ্গবন্ধুকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অবিসংবাদিত নেতা করে তুলেছে।তাছাড়া অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা,ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব পোষণের ক্ষমতা তাকে একজন খাঁটি বাঙ্গালিরও পরিচয় দিয়েছে। এভাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজনৈতিক নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যান মুক্তির দিশায়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বেই জন্মলাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশ।তিনি রাজবন্দী হিসেবে কারাগারে থাকার সময় তিনটি বই রচনা করেন। তিনটি বই সুখপাঠ্য ও তথ্যসমৃদ্ধ। বইগুলো হলোঃ অসমাপ্ত আত্মজীবনী(২০১২), কারাগারে রোজনামচা(২০১৭),আমার দেখা নয়াচীন(২০২০)। তার লেখা এই বইগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট একদল বিপথগামী সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি কর্তৃক পরিচালিত জনমত জরিপে শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে নির্বাচিত হন।বইয়ের সংক্ষিপ্তসার:-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ অসমাপ্ত আত্মজীবনী। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী থাকাকালে তিনি এটি লেখা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক করে তাকে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে গেলে লেখা বন্ধ হয়ে যায়। আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বইয়ের শুরুর দিকে তিনি বলেন— ' বন্ধুবান্ধব বলে,তোমার জীবনী লেখ। সহকর্মীরা বলে রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাগুলি লিখে রাখ,ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আমার সহধর্মী একদিনে জেলগেটে বসে বলল, বসেই তো আছ,লেখ তোমার জীবন কাহিনী।বললাম, লিখতে পারিনা; আর এমন কি করেছি যা লেখা যায়! আমার জীবনের ঘটনাগুলো জেনে জনসাধারণের কি কোন কাজে লাগবে? কিছুই তো করতে পারলাম না। শুধু এটুকু বলতে পারি,নীতি আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।'আত্মজীবনী সাধারণত শুরু হয় নিজের কথা বা নিজের গুণকীর্তন দিয়ে।কিন্তু 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র শুরুটা হয়েছে একটু অন্যভাবে। এখানে তিনি নিজের কথা না বলে তাঁর রাজনৈতিক গুরু শহীদ সাহেবের( হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) কথা দিয়ে শুরু করেছেন–' ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা।কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হলো। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম।কিভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।'বইয়ের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধু তাঁর পারিবারিক ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। সেই বর্ণনা থেকে জানা যায় তার জন্ম টুঙ্গিপাড়ার শেখ বংশে।শেখ বোরহান উদ্দিন নামে এক ধার্মিক লোক এ বংশের গোড়াপত্তন করেছিলেন। একই সাথে এ বংশের পূর্ব ঐতিহ্য বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর শৈশব ও কৈশোরের দুরন্তপনার বর্ণনায় আছে—পুকুরে দীর্ঘ সময় সাঁতার কাটার, মাঠে ফুটবল নিয়ে সারা দিন পরে থাকা বা যে কোন জায়গায় হঠাৎ করেই মারপিট শুরু করে দেওয়ার গল্প। এই দুরন্তপনার মধ্যেও বিশেষভাবে লক্ষণীয়,শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের শুরু থেকে কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি।অন্যায়,অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করা ছিল তার স্বভাব বিরুদ্ধ।অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি একইসাথে আত্মজীবনী ও রাজনৈতিক দলিল। নিজের জীবন কাহিনীর মধ্য দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর বিবরণ। অসমাপ্ত এ লেখায় ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৫ সালের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা রয়েছে। ১৯৩৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী শহীদ সাহেব ( হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী) একটি সভা উপলক্ষে গোপালগঞ্জ যান।এ উপলক্ষে আয়োজিত এক্সিবিশনে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। সভাশেষে মিশন স্কুল পরিদর্শনে গেলে তার সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম কথা হয়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই শহীদ সাহেবকে তিনি নিয়মিত চিঠি লিখতেন।১৯৩৯ সালে কলকাতায় বেড়াতে গেলে তাদের আবার দেখা হয়। সেখান থেকে ফিরে এসে গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন করেন এবং তিনি সম্পাদক নির্বাচিত হন। এভাবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। ১৯৪১ সালের পর পুরোপুরিভাবে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি করতে গিয়ে পরিবার কর্তৃক কখনো বাধাপ্রাপ্ত হন নাই বরং সবসময়ই অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলেন; যা বোঝা যায় তার পিতার এ উক্তিটির মাধ্যমে —' বাবা রাজনীতি করো আপত্তি করব না, পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এতো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতেও ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবা না। আরেকটা কথা মনে রেখো Sincerity of purpose and honesty of purpose থাকলে জীবনে পরাজিত হবে না।'তাছাড়া তার স্ত্রীও পাশে থেকে সবসময় সাহস যুগিয়েছেন। প্রথমদিকে বাবার কাছ থেকে টাকা এনে রাজনৈতিক কাজে খরচ করতেন পরবর্তীতে স্ত্রী রেণু সংসারের খরচ বাঁচিয়ে তাঁর জন্য টাকা জমিয়ে রাখতেন।রাজনীতির সাথে জড়ানোর পর থেকে সব ধরনের জাতীয় ও গণতান্ত্রিক এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।আলোচ্য গ্রন্থে এর কালক্রমিক বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন তেতাল্লিশ এর দুর্ভিক্ষের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছি। তিনি তখন পুরোপুরি মাঠ পর্যায়ের কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শহীদ সাহেবের সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় লঙ্গরখানা খুলেন। রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে দুর্ভিক্ষ এবং তারপর বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা প্রশমনে শেখ মুজিবের সক্রিয় ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।বিশেষত' ৪৬ এর কলকাতার দাঙ্গার বিবরণ বেশ বিস্তৃতভাবে এসেছে এই বইয়ে। সে সময় দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি দিনরাত কাজ করে গেছেন।দাঙ্গার পরপরই এই অঞ্চলের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে দেশভাগের প্রসঙ্গ। সে সময় দেশবিভাগের কর্মকাণ্ডে তিনি এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে নিজের ব্যক্তিগত পড়াশুনাও মুলতবী রেখেছিলেন। এ ব্যাপারে তাঁর সহজ যুক্তি—নিজস্ব দেশই যদি না পাওয়া যায় তাহলে পড়াশোনা করে লাভ কি?দেশবিভাগের পরপরই বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন— স্বাধীন দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন তা অধরাই থেকে যাচ্ছে। দেশ বিভাগের পর তার রাজনীতির গুরু শহীদ সাহেব পশ্চিমবাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে সেখানেই থেকে গেলেন। এদিকে নাজিমুদ্দিন নেতা নির্বাচিত হয়ে ঢাকা চলে এলেন। শুরু হল মুসলিম লীগের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির খেলা। এসময় তিনি তার অবস্থান থেকে সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, কথা বলেছেন নিপীড়িত মানুষের পক্ষে।সে সব বর্ণনা অত্যন্ত প্রাঞ্জলভাবে এই বইয়ে উঠে এসেছে।শুধু তাই নয় কলকাতা সিলেট নিয়ে ব্রিটিশদের রাজনীতির বিবরণ পাওয়া যায়।দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে শুরু হয় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি আদায়ের আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, বিভিন্ন কর্মসূচি পালনে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়া প্রভৃতির বর্ণনা রয়েছে এ গ্রন্থে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনেও তার অংশগ্রহণের কথা এসেছে। এরই মধ্যে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ বেড়ে যাওয়ায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকায় পুরানো লীগ কর্মী ও অন্য অনেক নেতাকর্মী নিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।এছাড়া যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের কথা, আদমজী জুট মিলের দাঙ্গার কথা তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে বর্ণনা করেছেন। রাজনৈতিক কুটচাল, পার্টি ম্যানুপুলেশন, টাকার খেলা, দল বদলানো, মানুষের নতুন চেহারা উন্মোচন, সবই পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে। যুক্তফ্রন্ট হবার পর থেকে আরও নানাবিধ কিছু গন্ডগোল ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে কাহিনী প্রবাহ আগাতে গিয়ে হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায়। অসমাপ্ত এ লেখা আর শেষ করা হয় না।উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব :বইয়ের প্রসঙ্গক্রমে অনেক ব্যক্তিত্বের কথা উঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশিবার এসেছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কথা। লেখক যাকে 'শহীদ সাহেব' বলে সম্বোধন করে গেছেন। শহীদ সাহেব ছিলেন বঙ্গবন্ধু রাজনীতির গুরু, পরম শ্রদ্ধার পাত্র। পুরো বই জুড়ে তার প্রতি অকুণ্ঠ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে গেছেন। উঠে এসেছে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের কথা যাকে বইয়ে 'হক সাহেব ' বলে সম্বোধন করেছেন। 'হক সাহেব 'ছিলেন বাংলার জনপ্রিয় নেতা। তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে লেখক বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এমনকি তাঁর পিতা হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলতে নিষেধ করেছেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, ইত্তেফাকের সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, টাঙ্গাইলের শামসুল হক, আবুল মনসুর আহমেদ, আব্দুস সালাম খান, ফজলুল কাদের চৌধুরীর কথা উঠে এসেছে। এছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদের কথাও আলাদা ভাবে দু-একবার এসেছে।লেখকের ভ্রমনবৃত্তান্ত:পুরো বইয়ে তিন-চারবার বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণের বিবরণ এসেছে। ভ্রমণকাহিনী গুলোর খুঁটিনাটি সব গুছিয়ে লেখা। যেমন ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চীনের শান্তি সম্মেলনে যোগদান এবং পুরো চীন ভ্রমনের কাহিনী খুব সুন্দর ভাবে বর্ণিত হয়েছে। চীনের সমাজতন্ত্রের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পেয়েছে।আজমিরে মাজার জিয়ারত, দিল্লি ভ্রমণ ও আগ্রার তাজমহল ভ্রমণের বর্ণনা আছে আত্মজীবনীতে।নিজস্ব মূল্যায়ন/মন্তব্য:রাজনীতির কবি হিসেবে খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখের ভাষার মতোই বইটির ভাষারীতি অন্তত সহজ সুন্দর ও সাবলীল। চড়াই-উতরাইয়ের ভরা মহান এ নেতার জীবনের গল্প যেকোনো রোমান্স উপন্যাসকেও হার মানায়।বইয়ের শব্দ আর বাক্যের ব্যবহারে পাণ্ডিত্য কিংবা উপমা,রূপকের ব্যবহারে চমৎকারিত্ব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা নাই, নাই জ্ঞানগর্ভমূলক বা কোন উপদেশবাণী দেওয়ার চেষ্টা। তবুও মন্ত্রমুগ্ধের মতো পড়তে হয়। অন্তত সহজ ও নির্লিপ্ত ভাষায় পুরো ঘটনাপ্রবাহ তিনি লিখে গেছেন। কিছু জায়গায় ঘটনার প্রয়োজনে কিছু আবেগ তাড়িত কথাবার্তা এসেছে। কিন্তু সেটার পরিমাণ খুব বেশি নয়। এছাড়াও আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু শিল্প, সাহিত্য, কবিতা, সৌন্দর্যবোধ ও সঙ্গীতের প্রতি গভীর অনুরাগ এর পরিচয় পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করা, আব্বাস উদ্দিনের গানে মুগ্ধ হওয়ার ঘটনা আমাকে প্রফুল্ল করেছে।বইটি কেন পড়বেন?:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটির আবেদন বহুমাত্রিক। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি আত্মজৈবনিক বই হয়ে থাকেনি হয়ে উঠেছে হাজার ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশের বিশেষত পূর্ব বাংলার সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল।মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তরুণ প্রজন্মের কাছে এক মহান আদর্শ ব্যক্তিত্ব। তিনি তারুণ্যের চোখে অপ্রতিরোধ্য শক্তি ও অনুপ্রেরণার বাতিঘর।তরুণদের কাছে তিনি একাধারে জীবন সংগ্রামের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ও আদর্শের প্রতীক; অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কারিগর, উদার ব্যক্তিত্ব, সফল রাজনীতিবিদ।অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, রাজনৈতিক দূরদর্শী নেতা,বাঙালির প্রিয় ভালোবাসার মানুষ, অসাধারণ মেধার অধিকারী বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শন তরুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পূর্বে বাঙ্গালি জাতীয়তাবোধের চেতনা কোথায় এবং কখন থেকে উন্মেষ হয়েছিল তা জানার জন্য হলেও অসমাপ্ত আত্মজীবনীটি পাঠোদ্ধার করা জরুরী। তাছাড়া বিসিএস ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করতে হলেও অসমাপ্ত আত্মজীবনী আপনাকে পড়তেই হবে।© HASIB- DU
Remember me
Comments (1)