ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ সামিট ২০২০ ইং
বঙ্গবন্ধুর কাছে খোলা চিঠি -১
নামঃ অয়ন চক্রবর্তী।
ইমেইলঃ chakrabortyayan026@gmail.com
রেফারেন্সকারী দলঃ 'বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা'।
১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ইং৷
কালীবাড়ি রোড, বরিশাল।
শ্রদ্ধাস্পদেষু পিতা,
আমি বিশ্বাস করি - এই বাংলার প্রতিটি কোণে মিশে আছেন আপনি৷ তাই আপনি আমার লেখা এই চিঠি পাবেন - সেই অলৌকিক বিশ্বাস ও স্বপ্ন নিয়ে আপনার প্রতি আমার এই চিঠি লেখা।
পিতা, আমার কাছে বাংলাদেশ ও আপনি সমার্থক শব্দ ও পরস্পর পরিপূরক। পিতা, আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা - জাতীয়... moreইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ সামিট ২০২০ ইং
বঙ্গবন্ধুর কাছে খোলা চিঠি -১
নামঃ অয়ন চক্রবর্তী।
ইমেইলঃ chakrabortyayan026@gmail.com
রেফারেন্সকারী দলঃ 'বঙ্গবন্ধুর সহযোদ্ধা'।
১৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ইং৷
কালীবাড়ি রোড, বরিশাল।
শ্রদ্ধাস্পদেষু পিতা,
আমি বিশ্বাস করি - এই বাংলার প্রতিটি কোণে মিশে আছেন আপনি৷ তাই আপনি আমার লেখা এই চিঠি পাবেন - সেই অলৌকিক বিশ্বাস ও স্বপ্ন নিয়ে আপনার প্রতি আমার এই চিঠি লেখা।
পিতা, আমার কাছে বাংলাদেশ ও আপনি সমার্থক শব্দ ও পরস্পর পরিপূরক। পিতা, আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা - জাতীয় পতাকা যখন উড়তে দেখি, সেই সবুজের মাঝে লাল বৃত্তে আমি আপনাকে দেখি। তাই আমি অন্তরের অন্তস্তল থেকে বিশ্বাস করি- বাংলাদেশ যতদিন বেঁচে আছে, ততদিন আপনিও স্বমহিমায় বাংলাদেশের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আমি বিশ্বাস করি কবি শামসুর রাহমানের সেই কালজয়ী কাব্যে - "মুজিব মরে না, মরেনি মুজিব, কোনো বুলেটের ঘায়/ বুলেটে পতিত দেহই কেবল, অমর সে আত্মায়।" সামান্য বুলেট কি বাঙালি জাতির মহীরুহ বঙ্গবন্ধুকে নিঃশেষ করে দিতে পারে? কখনোই সম্ভব নয়। শৈশব থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠন সবখানেই তো আপনার দীপ্ত পদচারণা। আপনি আর বাংলাদেশ তাই অবিচ্ছেদ্য, পরস্পর একাত্ম। তাই যতদিন পর্যন্ত একজন মানুষও নিজেকে 'বাংলাদেশি' বলে পরিচয় দেবে, ততদিন অবধি আপনি সেই 'বাংলাদেশি' শব্দটার মাঝে বিরাজ করবেন।
পিতা, আপনার 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী', 'কারাগারের রোজনামচা' আর সম্প্রতি 'আমার দেখা নয়াচীন' পড়ে অপার বিস্ময়ে ডুবে গেছি - কী ভীষণ দেশপ্রেম, আবেগ, মমতা, প্রতিজ্ঞা, সাহস, ধৈর্য, সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, একাগ্রতা, মানবপ্রেম আর আত্মত্যাগের বাসনা সেই তরুণ বয়স থেকেই মনেপ্রাণে ধারণ করতেন আপনি! নিজের দেশ ও জাতিসত্তাকে ভালোবেসে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কাটিয়েছেন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। প্রহসনের মামলায় ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণেছেন ; সেই মুহূর্তেও বলেছেন, "আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ।আমাকে ফাঁসি দাও দুঃখ নাই, শুধু আমার লাশটা বাংলার মাটিতে পৌঁছে দিও।" প্রথমবার যখন 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থটি পড়েছিলাম, তখন বইয়ের শুরুতেই আপনার হস্তাক্ষরে একটি লেখা পড়ে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। সেখানে লেখা ছিল - "একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা। যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি ও অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।" আমি অবাক হয়ে ভেবেছি - একটা জাতিকে একজন মানুষ কীভাবে এতটা ভালোবাসতে পারে। পরে বুঝেছি - এই অবর্ণনীয় ভালোবাসার জন্যই আপনি 'জাতির পিতা'; এই অকৃত্রিম ভালোবাসাই আপনাকে রূপান্তরিত করেছে বাঙালি জাতির মহাজাগরণের পথিকৃতে।
যে দেশ ও জাতিকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্তি দিতে গিয়ে অবর্ণনীয় অত্যাচার সহ্য করেছেন - সেই দেশ আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশে, বিজয়ের পঞ্চাশের দ্বারপ্রান্তে। পিতা, আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করে - স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আপনার কী অনুভূতি? আমরা কি আপনার দেখানো পথকে মনেপ্রাণে ধারণ করে এগোতে পারছি?
বাঙালির অকূলতারণ আপনি; আপনি জন্মেছিলেন বলেই তো আমরা নতুন প্রজন্ম স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে জন্মেছি। এই জন্মঋণ পরিশোধের কোনো উপায় কি আছে? আমার মনে হয় - অবশ্যই আছে। সংবিধান প্রণয়নকালে আপনি বলেছিলেন, "ভবিষ্যৎ বংশধররা যদি সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে আমার জীবন সার্থক হবে, শহীদদের রক্তদান সার্থক হবে।" আমি বিশ্বাস করি - আমরা যদি কায়মনোবাক্যে আপনার আদর্শকে মেনে চলি, আপনার প্রতি ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।
মৃত্যুসিন্ধুতটে আপনি সদা জ্যোতির্ময় হয়ে আছেন, পিতা। বাঙালির আশায়-ভাষায়-ভালোবাসায় 'বঙ্গবন্ধু' শব্দটি সদা চিরঞ্জীব। কবিগুরুর ভাষায় তাই বলি, "দুঃখের পথে তোমারই তূর্য বাজে--/ অরুণবহ্নি জ্বালাও চিত্তমাঝে, মৃত্যুর হোক লয়।"