গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, আগের মাসে যা ছিল ২.৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বৈদেশিক রপ্তানি আয় সর্বকালের সর্বোচ্চ ৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল ২০১৯-এর জুলাইয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে করোনা সংক্রমিত বর্ষে, বার্ষিক তুলনামূলক হিসাবে ২০২০ সালের আগস্টে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় মোট রপ্তানি ২.৪% হ্রাস পেয়েছে। গত আগস্টে মোট আমদানি হয়েছে ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা, যা বার্ষিক তুলনামূলক হিসেবে আগের বছরের আগস্টের তুলনায় ৬.৬% কমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি রেকর্ডের পরে ধীরে ধীরে কমে ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে; এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতিও কমে গেছে। এক বছরের মধ্যে আমদানি কমেছে প্রায় ১.৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি মাত্র ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে, যা এক বছর আগেও ছিল দুই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
রোহিঙ্গাবিষয়ক সাহায্যসহ গত অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭২৭ কোটি ডলার বৈদেশিক সাহায্য পেয়েছে, যার প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ। ২% প্রণোদনা, দ্রুত রেমিট্যান্স জমা এবং করোনাকালে বিদেশ ভ্রমণ (হজ, ওমরাহ, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা, বিনোদন, ভ্রমণ, শপিং ইত্যাদি) কমে এসে হুন্ডি কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স বেড়ে গেছে। রেমিট্যান্স বাড়ার অন্য অপ্রমাণিত অভিমতগুলো হচ্ছে, বিদেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলায় পাচারকৃত অর্থের কিছু ফেরত আসছে, ইনভয়েসিংয়ের নামে অর্থ পাচার কমেছে কিংবা কালোটাকা প্রণোদনা যুক্ত হয়ে রেমিট্যান্স হয়ে ফেরত আসছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি দশমিক ৯৭ শতাংশ, অন্যদিকে জুলাই-সেপ্টেম্বরে আমদানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে (-) ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। (প্রথম আলো, ১০-১১-২০২০)। অর্থাৎ রপ্তানি আয়ের বিপরীতে আমদানি আরও বেশি কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি উত্তরোত্তর বাড়ছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি ৪২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে থাকলে আমদানি ব্যয় রপ্তানিকে ছাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতিকে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা।
রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া কি শক্তিশালী অর্থনীতির চিত্র, নাকি বিনিয়োগ ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির স্থবিরতা, আমদানি-রপ্তানিসহ সার্বিক অর্থনীতিরই স্থবিরতা এই আলোচনা প্রাসঙ্গিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রিজার্ভের বিকল্প ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, রিজার্ভের ডলার থেকে ঋণ নেয়ার সম্ভব্যতা যাচাই করতে বলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়নে রিজার্ভ থেকে সরাসরি ঋণদানে মত নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, ‘সরকারি খাতের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরাসরি অর্থায়ন করতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রচলিত পদ্ধতিতে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দেয়া হয়, সরাসরি কোনো প্রকল্পে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়ার সুযোগ নেই।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে কঠিন কিছু শর্তসাপেক্ষে বৈদেশিক মুদ্রা ধার দিয়ে, বিক্রি করে বা আমানত রেখে উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রকল্পটি সরকারি খাতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত হতে হবে, এর বিপরীতে সরকারের গ্যারান্টি থাকতে হবে। প্রকল্পকে অবশ্যই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে হবে, তা না হলে অর্থায়ন পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবে না। প্রকল্পের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ব্যাপারে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করতে হবে। সম্ভাব্য কোনো বিপর্যয়ের কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাধাগ্রস্ত হবে কিনা তাও দেখতে হবে।’ (যুগান্তর ১-১১-২০২০)।
#ঋণ_জিডিপি_অনুপাতে_উল্লম্ফন
এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) পাওনা পরিশোধের পরও বাংলাদেশের আনুমানিক ৯ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ রয়েছে। বেশি রিজার্ভ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য বাড়ায়, তবে সরকারের বৈদেশিক ঋণ নেয়ার হার বেশ ব্যাপক। আইএমএফ কান্ট্রি রিপোর্ট ১২/২৯৯ অনুসারে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ জিডিপি অনুপাত ছিল ৩২,৭%। কিন্তু নতুন আইএমএফ রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৯-এর শেষে ঋণ জিডিপি অনুপাত দেশের ইতিহাসের রেকর্ড ৩৬ উঠে গিয়েছিল। করোনাকালীন সংকটে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে ঋণ জিডিপি অনুপাত নতুন রেকর্ড ৪১ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে (আইএমএফ, ১২ জুন ২০২০)। তবে অর্থনীতি সমিতি বলেছে, বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৫৩ শতাংশের সমান হয়ে গেছে!
#অভ্যন্তরীণ_ঋণের_প্রবৃদ্ধি_আর_কত_বাড়বে?
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার মোট ৬১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। আগের অর্থবছরে ছিল ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। টাকার খোঁজে হন্যে হয়ে সরকার সবাইকে হতভম্ব করে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। সরকারি ঋণের তথ্য আসলে নিট, যা পূর্বের ঋণের সুদ দেয়ার পরে হিসাবকৃত। বার্ষিক গ্রস বা মোট ঋণের পরিমাণের চেয়ে বেশি অনেক অনেক বেশি।
জুলাই ২০১৯ সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা থেকে লাফিয়ে, ২০২০ সালের জুলাই শেষে এক লাখ ৯৬ হাজার ৬৯৪ কোটিতে পৌঁছেছে। অর্থাৎ সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র এক বছরে ৫১.৩৫%। সুতরাং ফর্ম যাই হোক না কেন, নিজস্ব হলেও অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানোর কোনোই সুযোগ নেই।
#বৈদেশিক_ঋণের_ট্রেন্ড_ব্রেক
২০২০ সালের জুনে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৬৫.২ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এর আগের প্রান্তিকে ৬৫.০ মার্কিন ডলার ছিল। ২০১২ সালের মার্চ মাসে এটি ২২.১ মার্কিন ডলার ছিল। জুন ২০২০-এ বৈদেশিক ঋণ বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ ৬৫.৩ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ স্বাধীনতার ৪১ বছরের পর বৈদেশিক ঋণের যে স্থিতি ছিল, এরপরের মাত্র আট বছরেই বৈদেশিক ঋণের স্থিতি আগের ৪১ বছরের প্রায় তিন গুণ (২.৯৫) হয়ে গেল। ৪১ বছরে অর্জিত স্বল্প ঋণ সক্ষমতাকে অর্থাৎ ক্রেডিট রেটিংয়ের ওপর ভর করে বর্তমান সরকার একের পর এক ছোট-বড় প্রকল্পে ক্রমাগত বৈদেশিক ঋণ নিতে শুরু করে এবং মাত্র আট বছরেই এই ঋণকে তিন গুণ বৃদ্ধি করে ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তির সময়োপযোগী সম্ভাবনাকে কঠিন করে তুলেছে।
তবে কিছু অসমর্থিত সূত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের বর্তমান স্থিতি ৬৫.৩ বিলিয়ন ডলার নয় বরং গ্রেস পিরিয়ড পেরিয়ে যায়নি-এমন সব প্রকল্প ঋণ মিলে প্রকৃত ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অর্থাৎ মোট জিডিপির প্রায় ৩২% শুধু বৈদেশিক ঋণ। অর্থনীতি সমিতির তথ্যে দেখা যায় মোট ঋণ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। সমস্যা হচ্ছে, আগামীতে বহু প্রকল্প ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে দেশের বার্ষিক বাজেটের ওপর ইতোমধ্যে বোঝা হয়ে ওঠা সুদের খাত ভয়াবহ সংকট তৈরি করতে পারে। ইতোমধ্যে ঋণের সুদ প্রদান বাজাটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত হয়ে গেছে।
#সভ্রেন_ওয়েলথ_ফান্ড
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর সতর্কতা অবলম্বন করে ‘সভ্রেন ওয়েলথ ফান্ড’-এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ করার কথা বলেছেন। ড. মনসুর বরং সরকারকে রাজস্ব আদায় বাড়াতে জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন। মূল বিষয় হচ্ছে, বিনিয়োগকৃত ঋণ প্রকল্প বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে কিনা? যদি কোনো প্রকল্পে অর্থ দেয়া হয়ও, তাহলেও রিজার্ভের ঋণ ফেরত দেয়া হবে না কখনই। বরং পুরোনো ঋণের টাকা ফেরত দিতে নতুন ঋণ করার মতো ঘটনা ঘটবে, আসলে এতে রিজার্ভ একই থাকবে। অর্থাৎ রিজার্ভ ঋণ আসলে কোনো ঋণ নয়, এটা শুধুই বৈদেশিক মুদ্রা খরচ। তাই স্থানীয় মুদ্রায় আয় করা প্রকল্প বিনিয়োগ করলে রিজার্ভ থেকে কৃত ঋণের সমপরিমাণ অর্থ জিডিপি থেকেও বিয়োগ করে ফেলা উচিত হবে। কেননা রপ্তানি আয়, সাহায্য, বৈদেশিক অর্থঋণ বা রেমিট্যান্সের যেই ফর্মেই রিজার্ভ আসুক না কেন, স্থানীয় মুদ্রায় তার সমপরিমাণ ‘অর্থ সরবরাহ’ হয়ে গেছে। তাই দ্বিতীয় বার খরচের ফর্মে ‘একই বৈদেশিক মুদ্রার’ আবারও জিডিপিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে কি?
#বৈদেশিক_মুদ্রা_রিজার্ভের_বিপরীতে_স্থানীয়_মুদ্রা_তৈরি
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এ (টিবিএস নিউজ) লিখেছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ হিসেবে যে ডলার বিদেশের বিভিন্ন নস্ত্র অ্যাকাউন্টে সংরক্ষিত আছে, তার বিপরীতে নতুন মুদ্রা ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে এবং তা স্থানীয় কারেন্সিতে যোগ করা হয়ে গেছে। তাই নতুন করে ঋণ নেয়ার সুযোগ নেই। বর্তমানে ডলারের বিপরীতে টাকার যে মূল্যমান আছে, সেটা এই রিজার্ভের বিনিময়েই তৈরি। ব্রেটন উডস সিস্টেম ছাড়া বাদবাকি যেসব ‘সভরেন ফ্রি ফ্লোটিং কারেন্সি’-তার অন্যতম একটা ভিত্তি হচ্ছে ‘ফরেক্স রিজার্ভের’ বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা তৈরি করা। ফলে সেই একই বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ঋণ নেওয়া এবং সেটা সরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগে করার মানে হচ্ছে, একই ডলার দিয়ে পুনরায় টাকা তৈরি করে দ্বিতীয়বার সেই টাকা অর্থনীতিতে ঢুকানো, যেটা কোনোমতেই করা যায় না। করলে এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যালান্সশিটে’ অসাম্য তৈরি করবে, এতে টাকার মূল্যমানও ভারসাম্য হারাতে পারে। অন্যদিকে যদি নস্ত্র অ্যাকাউন্টের সংরক্ষিত ডলার দিয়ে সরকার বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধ করে, কিন্তু সেই একই পরিমাণ টাকা স্থানীয় মুদ্রা থেকে সরিয়ে না নেয়া হয় তবে সেটাও টোকার মূল্যমান কমিয়ে আনতে পারে।
#বৈদেশিক_রিজার্ভ_কখনোই_অলস_নয়
বড় রিজার্ভের বিপরীতে অর্থ প্রত্যাবাসন সহজ হয় বলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়। বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার এবং দেশের ঋণমান (ক্রেডিট রেটিং) নির্ধারণে রিজার্ভের গুরুত্ব অপরিসীম। বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে জোগান হয়। বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার বিনিময় হার যৌক্তিক পর্যায়ে ধরে রাখতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় তারল্য বাড়ানো হয়, ফলে বিনিময় হার দীর্ঘদিন ধরেই স্থিতিশীল। সুতরাং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আসলে অলস পড়ে থাকে না, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের ইকোসিস্টেমকে সচল রাখে। তাই রিজার্ভের অর্থের নীতিবিরুদ্ধ বিকল্প ব্যবহারের সুযোগও নেই।
#তড়িঘড়ি_সিদ্ধান্ত_কাম্য_নয়
বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দায় একটা বড়সড় রিজার্ভ সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করে ভূমিকা রাখবে। বড় সংকটের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কতটা কার্যকরী হয়, তার উদাহরণ হচ্ছে ২০০৮-০৯ সময়ের ব্রাজিল ও মেক্সিকো। গবেষণায় দেখা গেছে, ওই সময়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্রাজিল ভালো করলেও মেক্সিকো ছিল ব্যর্থ। কারণ, অর্থনীতিকে ঠেকা দেয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ ব্রাজিলের ছিল, যা মেক্সিকোর ছিল না। ফলে সে সময় ব্রাজিল তার মুদ্রার মূল্যমান ধরে রাখতে পেরেছিল, মেক্সিকোর পরিস্থিতি ছিল উল্টো। সরকার চাইলে খুব দরকারি কর্মসংস্থানবান্ধব খাতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে উৎসাহ দিতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর খাতে যেখানে বহু লোকের কর্ম হবে, দেশে ও দেশের বাইরে করোনাকালে নতুন যেসব পণ্যবাজার গড়ে উঠেছে, সেখানে। এতে পুরোনো খাতে বিরক্ত হওয়া শিল্পোদ্যোক্তারা নতুন খাতে বিনিয়োগ করবে, অর্থনীতির সরবরাহ সংকট উত্তরণ হবে। কর্মসংস্থান হয়ে ডিমান্ড সাইড অর্থাৎ ক্রয়ক্ষমতাও বাড়বে। পাশাপাশি যেহেতু করোনাকালীন একটা অনিশ্চয়তা এবং বৈশ্বিক সংকটে বিরাজমান, তাই কিছুটা বর্ধিত রিজার্ভ সম্ভাব্য যে কোনো নতুন সংকট মোকাবিলাতেও কাজে দেবে। বৈদেশিক রিজার্ভের দূরদর্শী ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা দরকার। পাশাপাশি বিদ্যমান স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে সম্মান করাও জরুরি। বৈশ্বিক বাস্তবতাও তাই বলে।
Comments (0)