দ্বিতীয় পদ্মাসেতুও সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে

প্রথম পদ্মাসেতুর মতো দ্বিতীয় পদ্মাসেতুও নিজস্ব অর্থায়নেই বাস্তবায়নের বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বাজেটের আগেই এ সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত জরিপ করা হবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় পদ্মাসেতুতে কারিগরি সহায়তা দেবে চীন। আগামী বাজেটের আগেই জরিপ শেষ করে দ্রুত ডিজাইনের কাজে হাত দিতে আগ্রহী সরকার। এতে প্রথম পদ্মাসেতুর অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে। 

এদিকে বহুল আলোচিত স্বপ্নের পদ্মাসেতুর কাজ এগোচ্ছে দ্রুত গতিতে। এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মূল সেতুর কাজের ভৌত অগগ্রতি হয়েছে ৯১ শতাংশ। এরই মধ্যে সবকটি স্প্যান বসানো হয়েছে। 

এ পরিস্থিতিতে সামনে চলে এসেছে দ্বিতীয় পদ্মাসেতুর আলোচনা। যদিও দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনা প্রায় ১১ বছর আগে করা হয়েছিল। 

এদিকে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে জাইকা তাদের বিস্তারিত সমীক্ষায় চারটি স্থানকে সুবিধাজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো-পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ, দোহার-চরভদ্রাসন, মাওয়া-জাজিরা ও চাঁদপুর-ভেদরগঞ্জ। এগুলোর মধ্যে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে দেশের বৃহত্তম পদ্মা বহুমুখী সেতু বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে পাটুরিয়া- গোয়ালন্দ পয়েন্টে হবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। 

এবার ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটের আগেই দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের চূড়ান্ত জরিপ প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) নিয়ে এরই মধ্যে কাজ করছে সেতুবিভাগ। 

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে সরকার একক বা যৌথ অর্থায়নকারী হিসেবে কোন সংস্থাকে বেছে নেবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে সরকারের একাধিকবার আলোচনাও হয়েছে। 

উল্লেখ্য, প্রথম পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়ন প্রত্যাহার করে। তবে পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের সেই অপবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ওই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে আমলে নিয়ে দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নিয়ে কিছুটা ধীরেই এগুচ্ছে সরকার। নতুন করে আর কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে চায় না সরকার। 

জানা গেছে, কোনো অর্থায়নকারী স্বেচ্ছায় এগিয়ে না এলে নিজস্ব অর্থায়নেই হবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। এমন পরিকল্পনাই রয়েছে সরকারের। প্রয়োজনে রিজার্ভের অর্থও কাজে লাগানো হতে পারে। আবার পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতেও এগোতে পারে সরকার। সরকার একাধিক সম্ভাব্য বিকল্প রেখেই এগোচ্ছে। 

এদিকে প্রথম পদ্মাসেতুর মতো দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নেও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে পাশে থাকতে চায় চীন। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চীন সরকারের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। 

দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও রাজবাড়ীর সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমে আসবে। গোপালগঞ্জ, যশোর ও মাদারীপুর জেলার অংশবিশেষের দূরত্বও কমবে। 

জানতে চাইলে পদ্মাসেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম পদ্মাসেতু জনসাধারণ ও সরকারের বিরাট স্বপ্ন। সেটা এখন প্রায় শতভাগ বাস্তব রূপ নিয়েছে। দ্বিতীয় পদ্মাসেতুর ব্যাপারেও অনেক দিন আগে থেকেই সরকার পরিকল্পনা করছে। এটাও হবে একটি নতুন স্বাপ্নিক প্রকল্প। 

সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত দ্বিতীয় পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে অনুমোদন করেছেন। প্রথম দিকে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার  কোটি টাকার বেশি। পরে এর দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তবে এই ব্যয় আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।প্রতীকী ছবি

Posted in News Blogs on December 29 2020 at 11:07 AM

Comments (0)

No login
color_lens
gif