।
(মুজিব নগরে সেনা অফিসারদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি আতাউল গনি ওসমানী)
এই অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে (বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে) এবং কর্নেল এম এ জি ওসমানী মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে সরকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দেশ বিদেশের শতাধিক সাংবাদিক ও হাজার হাজার দেশবাসীর উপস্থিতিতে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংসদ জনাব আবদুল মান্নান। নবগঠিত সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বাঙালির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এই স্থানটির নামকরণ করা হয় ''মুজিব নগর''।
(ঢাকা কাঁপানো ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা। অধিনায়ক মোফাজ্জল হোসেন মায়ার নামে ‘মায়া ক্র্যাক প্লাটুন’ নামে পরিচিত ছিলেন তারা।)
(অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা)
(ক্যাম্প ছাড়ছেন মুক্তিযোদ্ধারা)
(মুক্তিযোদ্ধাদের ব্রিফিং)
(মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ)
(চুয়াডাঙ্গার লড়াই শেষে একজন পুলিশ সদস্য)
মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। রাজনৈতিকভাবে এই যুদ্ধকে সার্বজনীন করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সর্বসম্মতিক্রমে একটি ''সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ'' গঠন করেন। এই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেনঃ
ক) জনাব আব্দুল হামিদ খান ভাসানী (সভাপতি)--ন্যাপ ভাসানী
খ) শ্রী মনি সিং (সভাপতি)--বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টি
গ) অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ (সভাপতি)--ন্যাপ মোজাফ্ফর
ঘ) শ্রী মনোরঞ্জন ধর (সভাপতি)--বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস
ঙ) জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ (প্রধানমন্ত্রী)--পদাধিকারবলে
চ) খন্দকার মোশতাক আহমেদ (পররাষ্ট্রমন্ত্রী)--পদাধিকারবলে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ৯ মাসব্যাপী সশস্ত্র এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সরকার প্রায় এক কোটি শরণার্থীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে বিশ্বের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতায় উপস্থাপনসহ এবং একটি সময় উপযোগী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে সক্ষম হন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকারদের অত্যাচারে প্রায় এক কোটি বাঙালি দেশ ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ভারত সরকার ও ভারতের জনগণ দেশত্যাগী এই জনগোষ্ঠীর সার্বিক সাহায্যে এগিয়ে আসেন। ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা দান করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাঠামোয় কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গঃ
১। যে সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রশাসনিক কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেনঃ
ক) রাষ্ট্রপতির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব আবদুস সামাদ আজাদ, এম এন এ
খ) প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম, এম এন এ
গ) তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনাব আবদুল মান্নান, এম এন এ
ঘ) জয় বাংলা পত্রিকার উপদেষ্টা জনাব জিল্লুর রহমান, এম এন এ
ঙ) যুব শিবির নিয়ন্ত্রণ পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ আলী, এম এন এ
২। বেসামরিক প্রশাসনঃ
ক) ক্যাবিনেট সচিব জনাব হোসেন তৌফিক ইমাম (এইচ টি ইমাম)
খ) মুখ্য সচিব জনাব রুহুল কুদ্দুস
গ) সংস্থাপন সচিব জনাব নূরুল কাদের খান
ঘ) অর্থ সচিব জনাব খন্দকার আসাদুজ্জামান
ঙ) পররাষ্ট্র সচিব জনাব মাহাবুবুল আলম চাষী এবং জনাব আবুল ফতেহ
চ) প্রতিরক্ষা সচিব জনাব এম এ সামাদ
ছ) স্বরাষ্ট্র সচিব জনাব এ খালেক
জ) স্বাস্থ্য সচিব জনাব এস টি হোসেন
ঝ) তথ্য সচিব জনাব আনোয়ারুল হক খান
ঞ) কৃষি সচিব জনাব নুরউদ্দিন আহমেদ
ট) আইন সচিব জনাব এ হান্নান চৌধুরী
৩। কুটনৈতিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেনঃ
ক) মিশন প্রধান যুক্তরাজ্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী (বহিঃর্বিশ্বে সরকারের বিশেষ দূত)
খ) মিশন প্রধান কলিকাতা জনাব হোসেন আলী
গ) মিশন প্রধান নতুন দিল্লী জনাব হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী
ঘ) মিশন প্রধান যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা জনাব এম আর সিদ্দিকী
ঙ) মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইরাক জনাব আবু ফতেহ
চ) মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত সুইজারল্যান্ড জনাব অলিউর রহমান
ছ) মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিলিপাইন জনাব কে কে পন্নী
জ) মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেপাল জনাব মোস্তাফিজুর রহমান
ঝ) মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত হংকং জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ
ঞ) মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত জাপান জনাব এ রহিম
ট) মিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত লাগোস জনাব এম এ জায়গীরদার
৪। স্বাধীন বাংলাদেশের গণমুখী প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো কি হবে সেই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন
বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে পরিকল্পনা কমিশন একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে। যে সমস্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
এই পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন তাঁরা হলেনঃ
(ক) ডঃ মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী
(খ) ডঃ মোশারাফ হোসেন
(গ) ডঃ খান সরওয়ার মুরশিদ
(ঘ) ডঃ এম আনিসুজ্জামান
(ঙ) ডঃ স্বদেশ বোস।
৫। মুক্ত এলাকায় সুষ্ঠু প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা এবং ভারতে অবস্থান গ্রহণকারী শরণার্থীদের দেখাশুনা ও যুব শিবির পরিচালনার জন্য সরকার সমস্ত বাংলাদেশকে ১১টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করেন। প্রতিটি প্রশাসনিক এলাকায় চেয়ারম্যান ও প্রশাসক নিয়োগ করেন।
১৪. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রঃ
মুক্তিযুদ্ধ সময়কালে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের এবং অবরুদ্ধ এলাকার জনগণের মনোবল অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নীতি নির্ধারণী ভাষণসহ জনগণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নির্দেশাবলী প্রচারিত হয়। প্রতিদিনের সংবাদসহ যে সমস্ত অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তার মধ্যে চরমপত্র ও জল্লাদের দরবার অন্যতম। যে সমস্ত ব্যক্তির অক্লান্ত পরিশ্রমে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তাঁরা হলেনঃ
সর্বজনাব এম এ মান্নান এম এন এ, জিল্লুর রহমান এম এন এ, শওকত ওসমান, ডঃ এ আর মল্লিক, ডঃ মযহারুল ইসলাম, ডঃ আনিসুজ্জামান, সিকান্দার আবু জাফর, কল্যাণ মিত্র, ফয়েজ আহমদ, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, এম আর আখতার মুকুল, তোয়াব খান, আসাদ চৌধুরী, কামাল লোহানী, আলমগীর কবীর, মহাদেব সাহা, আলী যাকের, সৈয়দ হাসান ইমাম, নির্মলেন্দু গুণ, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ, বেলাল মোহাম্মদ, আবদুল জববার, আপেল মাহমুদ, রর্থীন্দ্রনাথ রায়, কাদেরী কিবরিয়া, ডাঃ অরূপ রতন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, সমর দাস, অজিত রায়, রাজু আহামেদ, মামুনুর রশীদ, বেগম মুশতারী শফি, শাহীন মাহমুদ, কল্যাণী ঘোষ, ডালিয়া নওশীন, মিতালী মুখার্জী, বুলবুল মহলানবীশ, শামসুল হুদা চৌধুরী, আশফাকুর রহমান খান, সৈয়দ আবদুস সাকেরসহ অনেকে।
১৫. বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীঃ
(মেলাঘরে ট্রেনিংয়ে নারী মুক্তিযোদ্ধারা)
(মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ)
যে জনযুদ্ধ এনেছে পতাকা, সেই জনযুদ্ধের দাবিদার এদেশের সাত কোটি বাঙালি। একটি সশস্ত্র যুদ্ধ দেশকে শত্রুমুক্ত করে। এই সশস্ত্র যুদ্ধ একটি নির্বাচিত সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। পরিকল্পিত এই যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১০ই এপ্রিল '৭১ বাংলাদেশ সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে ৪টি যুদ্ধঅঞ্চলে বিভক্ত করেন। এই ৪টি অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেনঃ
ক) চট্টগ্রাম অঞ্চল - মেজর জিয়াউর রহমান
খ) কুমিল্লা অঞ্চল - মেজর খালেদ মোশাররফ
গ) সিলেট অঞ্চল - মেজর কে এম সফিউল্লাহ
ঘ) দক্ষিণ পশ্চিম - অঞ্চল মেজর আবু ওসমান চৌধুরী
পরবর্তীতে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে বিভক্ত করে রাজশাহী অঞ্চলে মেজর নাজমুল হক, দিনাজপুর অঞ্চলে মেজর নওয়াজেস উদ্দিন এবং খুলনা অঞ্চলে মেজর জলিলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ৭ই জুলাই ৭১ যুদ্ধের কৌশলগত কারণে সরকার নিয়মিত পদাতিক ব্রিগেড গঠনের পরিকল্পনায় 'জেড ফোর্স' ব্রিগেড গঠন করেন। এই জেড ফোর্সের অধিনায়ক হলেন লেঃ কর্নেল জিয়াউর রহমান। একই ভাবে সেপ্টেম্বর মাসে 'এস ফোর্স' এবং ১৪ই অক্টোবর 'কে ফোর্স' গঠন করা হয়। কে ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন লেঃ কর্নেল খালেদ মোশাররফ এবং এস ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন লেঃ কর্নেল কে. এম. সফিউল্লাহ।
১০ই জুলাই ৭১ থেকে ১৭ই জুলাই ৭১ পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী সদর দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে যুদ্ধ অঞ্চলের অধিনায়কদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে বাংলাদেশকে ১১টি যুদ্ধ সেক্টরে বিভক্ত করে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। এই কমান্ডারগণ ছিলেনঃ
সেক্টর অধিনায়ক যুদ্ধ এলাকা ও তথ্য
সেক্টর-এক---- মেজর রফিকুল ইসলাম (চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমার অংশ বিশেষ (মুহুরী নদীর পূর্বপাড় পর্যন্ত)। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল পাঁচটি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ২১০০ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ২০,০০০।
সেক্টর-দুই----মেজর খালেদ মোশাররফ (কুমিল্লা জেলার অংশ, ঢাকা জেলা ও ফরিদপুর জেলার অংশ এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল ছয়টি)। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ৪,০০০ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ৩০,০০০।
সেক্টর-তিন----মেজর কে এম শফিউল্লাহ (কুমিল্লা জেলার অংশ, ময়মনসিংহ জেলার অংশ, ঢাকা ও সিলেট জেলার অংশ)।এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল সাতটি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ৬৬৯৩ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ২৫,০০০।
সেক্টর-চার----মেজর সি আর দত্ত (সিলেট জেলার অংশ। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল ছয়টি)। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ৯৭৫ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ৯,০০০।
সেক্টর-পাঁচ----মেজর মীর শওকত আলী সিলেট জেলার অংশ ও ময়মনসিংহ জেলার অংশ। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল ছয়টি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ১৯৩৬ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ৯,০০০।
সেক্টর-ছয়---- উইং কমান্ডার এম খাদেমুল বাশার রংপুর জেলা ও দিনাজপুর জেলার অংশ। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল পাঁচটি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ২৩১০ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ১১,০০০।
সেক্টর-সাত----মেজর নাজমুল হক রংপুর জেলার অংশ, রাজশাহী জেলার অংশ, পাবনা জেলার অংশ ও দিনাজপুর জেলার অংশ, বগুড়া জেলা। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল নয়টি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ২৩১০ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ১২,৫০০। সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মেজর নাজমুল হক নিহত হওয়ার পর লেঃ কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান সেক্টর অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সেক্টর-আট----মেজর আবু ওসমান চৌধুরী যশোর জেলা, ফরিদপুর জেলা, কুষ্টিয়া জেলা, খুলনা ও বরিশাল জেলার অংশ। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল সাতটি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ৩৩১১ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ৮,০০০। ১৮ই আগস্ট লেঃ কর্নেল এম আবুল মঞ্জুর সেক্টর অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সেক্টর-নয়---- মেজর আবদুল জলিল বরিশাল জেলার অংশ, পটুয়াখালী জেলা, খুলনা, ফরিদপুর জেলার অংশ। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল তিনটি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ৩৩১১ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ৮,০০০।
সেক্টর-দশ----প্রধান সেনাপতির নিয়ন্ত্রণে (নৌ সেক্টর)সমগ্র বাংলাদেশ। এই সেক্টরটি গঠিত হয়েছিল নৌ-কমান্ডোদের দিয়ে। বিভিন্ন নদী বন্দর ও শক্র পক্ষের নৌ-যানগুলোতে অভিযান চালানোর জন্য এঁদের বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হতো। লক্ষ্যবস্ত্তর গুরুত্ব এবং পাকিস্তানিদের প্রস্ত্ততি বিশ্লেষণ করে অভিযানে সাফল্য নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হতো এবং তার ওপর নির্ভর করত অভিযানে অংশগ্রহণকারী দলসমূহে যোদ্ধার সংখ্যা কত হবে। যে সেক্টর এলাকায় কমান্ডো অভিযান চালানো হতো, কমান্ডোরা সেই সেক্টর কমান্ডারের অধীনে কাজ করত। নৌ-অভিযান শেষে তারা আবার তাদের মূল সেক্টর- ১০ নম্বর সেক্টরের আওতায় চলে আসত। নৌ-কমান্ডোর সংখ্যা ছিল ৫১৫ জন।
সেক্টর এগার----মেজর আবু তাহের। ময়মনসিংহ জেলার অংশ, সিলেট জেলার অংশ ও রংপুর জেলার অংশ। এই সেক্টরের সাব-সেক্টর ছিল সাতটি। সেক্টর ট্রুপস্ ছিল ২৩১০ সৈন্য এবং গেরিলা ছিল ২৫,০০০। মেজর আবু তাহের ১৪ নভেম্বর আহত হওয়ার পর এই সেক্টরের দায়িত্ব কাউকেও দেয়া হয়নি।
১৬. মুক্তিবাহিনী সদর দপ্তরঃ
ক) প্রধান সেনাপতি মুক্তিবাহিনী কর্নেল এম এ জি ওসমানী
খ) সেনাবাহিনী প্রধান কর্নেল আবদুর রব
গ) বিমানবাহিনী প্রধান ও উপ-সেনা প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার
ঘ) ডাইরেক্টর জেনারেল মেডিকেল সার্ভিস মেজর শামছুল আলম
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ত্যাগ করে মোট ১৩১ জন অফিসার মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেন ও যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ৫৮ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা ভারতের মূর্তি অফিসার প্রশিক্ষণ একাডেমী থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করে যুদ্ধে যোগদান করেন। এ কোর্স-কে প্রথম বাংলাদেশ সর্ট সার্ভিস কোর্স বলা হয়। ৬৭ জন তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে দ্বিতীয় সর্ট সার্ভিস কোর্সে ভর্তি করা হয় এবং তারা ১৯৭২ সনে কমিশন প্রাপ্ত হন। মুক্তিযুদ্ধে ১৩ জন সামরিক অফিসার যুদ্ধ অবস্থায় শাহাদাত বরণ করেন। ৪৩ জন সামরিক অফিসারকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ এবং তার কয়েকদিনের মধ্যে হত্যা করে।
১৭. মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীঃ
ক। পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে আসা বাঙ্গালী অফিসার, ক্যাডেট ও বিমানসেনারা সেপ্টেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মোট প্রায় ৩৫ জন অফিসার ও ক্যাডেট এবং প্রায় ৫০০ বিমানসেনা পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। এইসব বিমান বাহিনীর সদস্যরা যদিও স্থলযুদ্ধে খুবই বিরোচিত ভুমিকা রাখছিলেন তবুও তাদের মধ্যে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের চেতনা খুব প্রবল ভাবে কাজ করছিল। এই চেতনা নিয়েই কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা পাইলট ভারতীয় বিমান বাহিনী, ভারতীয় সরকার এবং বাংলাদেশ ফোর্সেস (বিডি এফ) এর সাথে বিভিন্ন রকমের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
খ। কিলো ফ্লাইট : ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি ভারত সরকার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের জন্য আমেরিকায় তৈরী ১টি পুরানো ডিসি-৩ বিমান, কানাডার তৈরী ১টি অটার বিমান এবং ফ্রান্সের তৈরী ১টি এ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার দেয়। এর সাথে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে একটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরিত্যক্ত রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এই সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। বিমান বাহিনী প্রধান হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সশস্ত্র বিমান বাহিনী গঠনে গোপনীয়তা রক্ষার্থে এর গুপ্ত নাম হয় 'কিলো ফ্লাইট'। 'কিলো ফ্লাইটের' অস্তিত্ব বিডি এফ এবং গোটা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছাড়া আর কেউ জানতেন না। কিলো ফ্লাইটে বিমান বাহিনীর পাইলটদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পি আই এ এবং প্লান্ট প্রটেকশনের পাইলট এসে যোগ দেন। বিভিন্ন সেক্টর হতে যুদ্ধরত মোট ৫৮ জন বিমানসেনাকে এই ফ্লাইটে নিয়ে আসা হয়। এই ফ্লাইটের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয় স্কোঃ লীঃ সুলতান মাহমুদকে। এই সব অত্যুৎসাহী বিমান বাহিনী সদস্যদের সমন্বয়ে ১৯৭১ এর ২৮ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উদ্ধোধন হয়। শুরু হয় কঠোর প্রশিক্ষণ। এই ফ্লাইট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট এলাকায় মোট ৫০টি অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে। এদের মধ্যে মোগলহাটে (১৫ অক্টোবর ৭১), লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁয়ে (১৬ অক্টোবর ৭১), চৌগাছায় (২১ নভেম্বর ৭১), গোদনাইল ও পতেঙ্গায় (৩ ডিসেম্বর ৭১), সিলেটে (৪ ডিসেম্বর ৭১), জামালপুরে (৫ ডিসেম্বর ৭১), মেঘনা নদীতে (৬ ডিসেম্বর ৭১), সিলেটে (৭ ডিসেম্বর ৭১) এবং নরসিংদীতে (১১ ডিসেম্বর ৭১) বিমান হামলা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
১৮. মুক্তিযুদ্ধে নৌ-বাহিনীঃ
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ঐতিহাসিক সেক্টর কমান্ডারদের কনফারেন্সের ঘোষণা মোতাবেক বাংলাদেশ নৌ বাহিনী আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঙ্গালী অফিসার ও নাবিকগণ পশ্চিম পাকিস্তান ত্যাগ করে দেশে এসে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী গঠন করেন। ভারত থেকে প্রাপ্ত 'পদ্মা' ও 'পলাশ' নামের ছোট দুটি গানবোট এবং ৪৯ জন নাবিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সমস্ত নাবিকগণ শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হন। পাশাপাশি ' অপারেশন জ্যাকপট' নামে নির্ভীক ডুবুরীদল সমুদ্র ও নদী বন্দর সমূহে বিধংসী আক্রমণ পরিচালনা করেন। এতে হানাদার বাহিনীর ২৬ টি জাহাজ ধ্বংস হয় ও সমুদ্র পথ কার্যতঃ অচল হয়ে পড়ে। নৌ বাহিনীর অপারেশনের মধ্যে হিরণ পয়েন্টের মাইন আক্রমণ (১০ নভেম্বর ৭১), মার্কিন ও ব্রিটিশ নৌযান ধ্বংস (১২ নভেম্বর ৭১), চালনা বন্দরে নৌ হামলা (২২ নভেম্বর ৭১), চট্টগ্রাম নৌ অভিযান (০৫ ডিসেম্বর ৭১), পাকিস্তান নৌ ঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর অভিযান (১০ ডিসেম্বর ৭১) উল্লেখযোগ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে নৌ বাহিনীর দুঃসাহসিক অভিযানে শক্রপক্ষ নৌ পথে দিশেহারা হয়ে পড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বহুসংখ্যক নৌ সদস্য শাহাদৎ বরণ করেন। তাঁদের বীরত্ব ও আত্নত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ শহীদ রুহুল আমিন, ইআরএ-১, কে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রদান করা হয়। এছাড়া ০৫ জনকে বীর উত্তম, ০৮ জনকে বীর বিক্রম এবং ০৭ জনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে নৌ বাহিনীর ভূমিকাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
১৯. ব্রিগেড সংগঠন ও অপারেশনঃ
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকটা ছিল গেরিলাভিত্তিক কিন্তু এভাবে গেরিলা যুদ্ধ পাকিস্তানি বাহিনীর সুশিক্ষিত সৈন্যদের পদানত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছিল না। ফলে যুদ্ধ ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনয়ন ও মুক্তাঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর গঠন বিন্যাসের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এপ্রিল মাসে মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত ব্রিগেড গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সম্মুখ সমরের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সংগে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য তিনটি নিয়মিত ব্রিগেড গঠন করা হয়। এরা হচ্ছেঃ
ক) জেড ফোর্স- লেঃ কর্নেল জিয়াউর রহমানের নামানুসারে জুলাই ৭১ সনের ৭ই জুলাই গঠিত হয় এই বিগ্রেড যার নাম করা হয় জেড ফোর্স। এই ফোর্সের অন্তর্ভূক্ত ছিল ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ২ ফিল্ড ব্যাটারি আর্টিলারি ও একটি সিগন্যাল কোম্পানী। জুলাই ৭১ থেকে সেপ্টেম্বর ৭১ পর্যন্ত জেড ফোর্স ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও রৌমারী এলাকায় যুদ্ধরত থাকে। অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত তারা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকায় যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। জেড ফোর্সের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সমূহ ছিল কামালপুর যুদ্ধ, বাহাদুরাবাদ ঘাট অপারেশন, দেওয়ানগঞ্জ থানা আক্রমণ, নকসী বিওপি আক্রমন, চিলমারীর যুদ্ধ, হাজীপাড়ার যুদ্ধ, ছোটখাল, গোয়াইনঘাট, টেংরাটিলা, গোবিন্দগঞ্জ, লামাকাজি, সালুটিকর বিমানবন্দর, ধলই, ধামাই চা বাগান, জকিগঞ্জ, আলি ময়দান, সিলেট এমসি কলেজ, ভানুগাছা, কানাইঘাট, ফুলতলা চা বাগান, বড়লেখা, লাতু, সাগরনাল চা বাগান, ছাতক ও রাধানগর।
(রৌমারিতে জেড ফোর্স অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান পাশে লুঙ্গী পরিহিত শাফায়েত জামিল এবং নুরুন্নবী)
খ) কে ফোর্স- লেঃ কর্নেল খালেদ মোশাররফের নামানুসারে সেপ্টেম্বর ৭১ সনে গঠিত হয় এই বিগ্রেড যার নাম করা হয় কে ফোর্স। এই ফোর্সের অন্তর্ভূক্ত ছিল ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ১ ফিল্ড ব্যাটারি (মুজিব ব্যাটারী) আর্টিলারি ও একটি সিগন্যাল কোম্পানী। কে ফোর্সের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সমূহ ছিল দেউশ মন্দভাগ অভিযান, শালদা নদী অভিযান, পরশুরাম, চিতলিয়া, ফুলগাজী, নিলক্ষ্মীর যুদ্ধ, বিলোনিয়ার যুদ্ধ, চাপিলতার যুদ্ধ, কুমিল্লা শহরের যুদ্ধ, নোয়াখালীর যুদ্ধ, কশবার যুদ্ধ, বারচরগ্রাম যুদ্ধ, মিয়াবাজার যুদ্ধ, গাজীপুর যুদ্ধ, সলিয়াদীঘি যুদ্ধ, ফেনী যুদ্ধ, চট্টগ্রাম বিজয় ও ময়নামতি বিজয়।
(কসবায় সফল অপারেশন শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কে ফোর্স অধিনায়ক খালেদ মোশাররফ)
গ) এস ফোর্স- লেঃ কর্নেল কে এম সফিউল্লাহর নামানুসারে অক্টোম্বর ৭১ সনে গঠিত হয় এই বিগ্রেড যার নাম করা হয় এস ফোর্স। এই ফোর্সের অন্তর্ভূক্ত ছিল ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, এস ফোর্সের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সমূহ ছিল ধর্মগড় আক্রমন, মনোহরদী অবরোধ, কলাছড়া অপারেশন, বামুটিয়া অপারেশন, আশুগঞ্জ অপারেশন, মুকুন্দপুর যুদ্ধ, আখাউড়া যুদ্ধ, ব্রাহ্মণবাড়ীয় যুদ্ধ, ভৈরব ও আশুগঞ্জ যু্দ্ধ, কিশোরগঞ্জ যুদ্ধ, হরশপুর যু্দ্ধ, নরসিংদী যুদ্ধ ও বিলোনিয়ার যুদ্ধ।
(সফল অপারেশন শেষে এস ফোর্স অধিনায়ক মেজর শফিউল্লাহ (ছেড়া লুঙ্গী, ডান থেকে তৃতীয়)
২০. বি এল এফ (মুজিব বাহিনী):
জেনারেল উবানের সঙ্গে মুজিব বাহিনীর চার অধিনায়ক। বা থেকে আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, উবান, শেখ ফজলুল হক মনি এবং সিরাজুল আলম খান)
বিশাল এই জনযুদ্ধে ছাত্র ও যুবক শ্রেণী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভুমিতে ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। ৬০ দশকের মাঝামাঝি এই ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের পরিকল্পনায় সংগঠিত হয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্রদের সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্ত্ততি সমন্বিত করে। নেতৃস্থানীয় প্রায় ১০,০০০ (দশ হাজার) ছাত্রকে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সমগ্র বাংলাদেশকে ৪টি রাজনৈতিক যুদ্ধ অঞ্চলে বিভক্ত করে এই সমস্ত ছাত্রদেরকে নিজ নিজ এলাকার ভিত্তিতে অবস্থান নেয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়।
এই ৪টি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণকারী নেতৃবৃন্দ ছিলঃ
ক) পূর্ব অঞ্চল জনাব শেখ ফজলুল হক মনি ও জনাব আ স ম আবদুর রব
খ) উত্তর অঞ্চল জনাব সিরাজুল আলম খান ও জনাব মনিরুল ইসলাম
গ) পশ্চিম অঞ্চল জনাব আবদুর রাজ্জাক ও জনাব সৈয়দ আহমদ
ঘ) দক্ষিণ অঞ্চল জনাব তোফায়েল আহমদ ও জনাব কাজী আরেফ আহমেদ
প্রশিক্ষণ শিবিরে কর্মরত ছিলেনঃ জনাব নূরে আলম জিকু, হাসানুল হক ইনু, শরীফ নূরুল আম্বিয়া, আফম মাহবুবুল হক ও মাসুদ আহমেদ রুমীসহ অনেকে। বাংলাদেশ কমুনিষ্ট পার্টির তত্ত্বাবধানে ছাত্র সংগঠন সংগঠিত হয়। এই সশস্ত্র যুব শ্রেণীকে নেতৃত্ব দেন জনাব হারুনুর রশীদ, নূরুল ইসলাম নাহিদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ অনেকে। এ ছাড়াও জনাব কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে এলাকা ভিত্তিক গড়ে ওঠা টাংগাইল মুক্তি বাহিনীর নাম উল্লেখ্যযোগ্য।
২১. স্বাধীন বাংলা বেতারঃ
১৯৭১ পাকিস্তান বিমান বাহিনী আক্রমণে তা ধ্বংস করা হয়। এর পর কিছু দিন আগরতলাতে এবং তারপর ২৫ মে ১৯৭১ কলকাতা থেকে সম্প্রচার নিয়মিত শুরু করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার বিশাল অবদান রাখে। চরম পত্র, রণাংগন কথিকা, রক্ত স্বাক্ষর, মুক্তিবাহিনীর জন্য প্রচারিত অনুষ্ঠান অগ্নিশিক্ষা, দেশাত্ত্ববোধক গান ইত্যাদি মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল।
২২. গণমাধ্যমঃ
বিভিন্ন দেশে সংবাদপত্র প্রকাশ করা। এই সব সংবাদপত্রে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা, বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম ও নির্দেশাবলী, নেত্রবৃন্দের বিবৃতি ও তৎপরতা, প্রবাসী বাঙ্গালীদের আন্দোলনের খবর ইত্যাদি প্রকাশিত হত। এদের মধ্যে মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত জয় বাংলা, বাংলাদেশ, বঙ্গবাণী, স্বদেশ, রণাঙ্গন, স্বাধীন বাংলা, মুক্তিযুদ্ধ, সোনার বাংলা, বিপ্লবী বাংলাদেশ, জন্মভূমি, বাংলারবাণী, নতুন বাংলা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ নিউজ লেটার, বাংলাদেশ সংবাদ পরিক্রমা, আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ নিউজ লেটার, বাংলাদেশ নিউজ বুলেটিন, শিক্ষা উল্লেখযোগ্য। কানাডা থেকে বাংলাদেশ স্ফুলিঙ্গ নামক সংবাদপত্র প্রকাশিত হত।
২৩. পাকিস্তা
Comments (0)