'ইলন মাস্ক', 'ইলন রিভ মাস্ক'। একজন সর্বকালের সেরা উদ্যোক্তা, একজন কোটি তরুণের আইডল, একজন মেধাবী পরিশ্রমী ব্যক্তি। কারো চোখে তিনি পাগল, কারো চোখে উন্মাদ, কিন্ত বেশিরভাগ মানুষই তাকে চেনে স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে। যিনি স্বপ্ন দেখিয়েই ক্ষান্ত হন না, স্বপ্নটাকে পূরণ করে দেখিয়ে দেন। ইলেকট্রিক কার থেকে মঙ্গল যাত্রা সবই সম্ভব করছেন। আমাদের মত গড়পড়তা ব্যক্তির জন্য পথপ্রদর্শক এই মহামানব। তার সাফল্যের রহস্য আসলে তিনি নিজেই।
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, "ইলন মাস্ক" এর সাফল্য রহস্য
১) হার না মানা মানসিকতা: তিনি কখনো হার মানেন না। তিনি যতবার হারবেন পরের বাউন্স ব্যাক করবেন। স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি।
২) পরিশ্রম: বর্তমান পৃথিবীতে তার মত পরিশ্রম খুব কম ব্যক্তি করেন। তিনি প্রতিদিন 16 ঘণ্টা কাজ করেন। পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। হোক সেটা মানসিক কিংবা শারীরিক—একমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমেই আপনি সফলতা অর্জন করতে পারেন। হয়তো তিনি তার কাজে সময় দিতে গিয়ে তার পরিবারকে সময় দিতে পারতেন না এর ফল হয়তো তার ব্যক্তিগত জীবনে পড়েছে।
৩) স্বপ্নবাজ: ইলন মাস্ক সর্বদাই স্বপ্নবাজ ছিলেন। তিনি কখনো স্বপ্ন দেখতে ভয় পেতেন না। তার স্বপ্নের ফলেই এত এত কোম্পানি তিনি দাঁড় করতে পেরেছেন। সোলার সিটি, নিউরালিংক, বোরিং কোম্পানি সবকিছুরই স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। জিপ টু পেপাল সবকিছু তার এই স্বপ্নের ফল। মাস্ক মনে করেন মার্সে মানুষ বসবাসের জন্য কিছু একটা করবেন এই স্বপ্নটাই তার সাফল্যের মূল সূত্র। এই সূত্রে দাঁড় করালেন স্পেস এক্স। ইলন মাস্ক এমন একজন মানুষ, যার মস্তিষ্ক সবসময়ই ব্যস্ত থাকে সুদূরপ্রসারী কোনো চিন্তাভাবনায়।
৪) সময়ের সদ্ব্যবহার: তিনি সর্বদাই সময়ের সদ্ব্যবহার করেন অযথা কখনো সময় নষ্ট করেন না। প্রতিটি মিটিং এর জন্য মাত্র 5 মিনিট ধার্য করেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তাকে মিটিং কমপ্লিট করতে হবে। তিনি সেই নিয়মে চলেন। প্রতিটি কোম্পানির জন্য তিনি আলাদা আলাদা সময় বরাদ্দ করে রাখেন।
৫) যেই কাজ ভালো লাগে সেই কাজ করা: তিনি সবসময়ই তার যায় কাজ ভালো লাগে সেই কাজ করেন। তার শখ হলো পৃথিবীর এক্সিস্টিং সমস্যাগুলো সমাধান করা তিনি সর্বদাই তাই করে যাচ্ছেন। ইলন বলেন, ‘যদি আপনি কাজটাকে ভালোবাসেন, তাহলে নিশ্চয়ই কাজের সময় ছাড়াও আপনি এটা নিয়ে ভাববেন। আপনার মস্তিষ্ক এই ভাবনার সঙ্গে অভ্যস্ত। আর যদি পছন্দ না করেন, জোর করে এটা সম্ভব নয়।’
৬) ঝুঁকি গ্রহণ: তার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতায় থাকে সাধারণ থেকে অসাধারণ করেছে। যখন টেসলা এবং স্পেস এক্স কোম্পানী একদম বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমুক্ষীন হয়েছিল, তখন তিনি সাহস হারাননি। ঝুঁকি নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তটিই গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কখনোই নতুন কিছু করতে ভয় পান না তার এতগুলো কোম্পানির দাঁড় করানোর পেছনে তার ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা একমাত্র দায়ী। পুরো ব্যাপারটিই ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। তবে জীবনে কিছু পেতে হলে ঝুঁকি তো নিতেই হবে!
৭) ব্যর্থতাকে বন্ধু বানানো: তিনি তার ব্যর্থতা থেকে বারবার শিখেছেন বারবার ফিরে এসেছেন। তার ব্যর্থতা নিয়ে যতই সমালোচনা হয়েছে তিনি সেটাকে ফিডব্যাক হিসেবে গ্রহণ করে আবার ফিরে এসেছেন। দুর্বল লোকেরা সমালোচনায় হতাশ হয়ে পড়েন। আর মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা সমালোচনাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে উন্নত করেন।
৮) বই পড়া: ইলন মাস্ক বই পড়ার উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র বই পড়ে তার কোম্পানিগুলো স্টার্ট করেছেন। স্পেশাল কোম্পানী শুধুমাত্র নিজে নিজে বই পড়ে অধ্যায়ন করে হোমওয়ার্ক করে এই বিলিয়ন ডলার কোম্পানি দাড় করেছেন। ইলনের বয়স যখন নয় বছর, তখন তিনি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা পুরোটা পড়ে ফেলেছিলেন! সে সময় বিজ্ঞান কল্পকাহিনি পড়ে গড়ে ১০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতেন।
৯) টিম নির্বাচন/ ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট: ইলন মাস্ক তার এই বৃহৎ সাম্রাজ্যের পিছনে তিনি একা নন তার সাথে জড়িত আছে লাখ কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার ডিজাইনার ম্যানেজার সহ অনেকেই। টেসলার সাবেক সিআইও জয় বিজ্যান এর ইন্টারভিউ দেখে ইলন মাস্কের টিম গঠন সম্বন্ধে কিছুটা আইডিয়া করা যায়। জয় বিজ্যানকে বোর্ডে পেতে তিনি অনেক চেষ্টা করেন এবং দেড় বছর চেষ্টার পরে জয় বিজ্যানকে টেসলায় নিয়োগ দিতে সক্ষম হন। ইলন মাস্ক ট্যালেন্ট মানেজমেন্ট খুব ভালোভাবে করতে পারেন। তিনি ট্যালেন্ট সংগ্রহ করেন এবং তার পরিচর্যা করেন।
- চিত্রে জয় বিজ্যান
১০) নেতৃত্ব: ইলন মাস্কের নেতৃত্বগুণ বর্তমান বিশ্বের সবার সেরা। তিনি তার টিমকে খুব ভালোভাবে লীড করতে পারেন। তার টিমকে তার লক্ষ্য সম্বন্ধে বোঝাতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। নেতৃত্ব হচ্ছে নেতা কর্তৃক প্রভাব বিস্তারের একটি সামাজিক প্রক্রিয়া যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করেন। ইলন মাস্কের দেখলেই তার টিম উৎফুল্ল হয়ে যায় এবং তার সাথে কাজ করতে মানুষ মরিয়া হয়ে থাকে। দেখা যায় এইসব কারণে তার নেতৃত্ব দিতে অনেক সহজ হয়ে যায়।
১১) ক্যাপিটালিজম: ইলন মাস্ক ক্যাপিটালিজমের পোস্টার বয়। তিনি এই অর্থব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ সদ্ব্যবহার করেছেন। তিনি আমেরিকায় বসবাস করেন এবং আমেরিকান নিয়ম নীতি অনুসারে চলেন তিনি জার্মান কিংবা রাশিয়ান আইডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হননা। হয়তো অনেকেই টেসলা কোম্পানিতে কর্মচারীদের ইউনিয়ন গঠনের বিরোধিতা নিয়ে তার সমালোচনা করেন। এটা যৌক্তিক নয়। আপনি একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলেই বুঝতে পারবেন।
১২) প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা: ইলন মাস্ক তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা সর্বদায় ত্রুটিপূর্ণ রাখেন। তার টেসলা কোম্পানিতে সেফটি অন্যান্য কোম্পানি চেয়ে অনেক বেশি ভালো। অনেকেই তার কোম্পানির সেফটি এবং নীতিমালা নিয়ে অনেক অপপ্রচার চালায়। তবে যা অনেকটা চক্রান্তমূলক। ইলন মাস্ক তার কোম্পানি যে পিরামিড আকারের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দাঁড় করিয়েছেন সেটা অত্যন্ত কার্যকর।
১৩) অনুরাগীদের সাথে যোগাযোগ রাখা / সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার: তিনি সব সময় তার ভক্ত শুভাকাঙ্খীদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। টুইটারে তিনি সর্বদাই তার ভক্তদের সাথে মেতে থাকেন। এমনকি জীবনের অনেক মেজর ডিসিশন এই তার ফলোয়ারদের উপর ছেড়ে দেন। তার ভক্তরা তাকে প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসা ও সম্মান করে। এতে দেখা যায় তার একটা পজেটিভ দিক হল কোন জিনিস লঞ্চ করলে তার ভক্তরা সবার আগেই নিবে। কিছুদিনের মধ্যে টেসলা ফোন আসবে হয়তোবা তার ভক্তরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে। টুইটারে তিনি একজন অতি সাধারন ব্যক্তির মত যেভাবে মিম শেয়ার করেন, কথা বলেন সেটা অনন্য অসাধারণ। অন্য কোন বিলিয়নিয়ার জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে হয়তো তার ধারে কাছে নেই। তার টুইটার তার কোম্পানির পি আর। তার গাড়ি কে নিয়ে কোন রিভিউ দিলে তিনি সবার আগে রেসপন্স করেন। ফিডব্যাক ফিড ফরওয়ার্ড করেন। তিনি এতটাই ইনফ্লুয়েনশিয়াল যে তার এক টুইটে পুরো শেয়ার মার্কেট ওঠানামা করে। তার এই অসাধারণ ক্ষমতা তিনি খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেন।
১৪) সমালোচনা: পৃথিবীর কোন ব্যক্তি সমালোচনার উর্ধে নয়। তিনি সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করেন। হয়তো তার অনেক টুইট মানুষের ভালো লাগে না। কিন্তু তিনি হয়তো সত্যটাই বলছেন অনেকেই বুঝতে পারছে না। তিনি সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন।
এত দ্রুতই ইলন মাস্ক পৃথিবীতে যে আমূল পরিবর্তনের ছাপ রেখে যাচ্ছেন, তা সত্যিই সাধারণ সাফল্যের পাল্লায় পরিমাপ করা সম্ভব নয়। বলাই বাহুল্য, “ভবিষ্যতের পৃথিবীর একজন রূপকার কে”- এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই যে নামটি এই মুহূর্তে সবার মাথায় আসবে, তিনিই হলেন ইলন মাস্ক। এখন ইলন মাস্ক স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মঙ্গলে বসবাস করার, মানুষের মস্তিস্কে মেমোরি চিপ বসানোর; তাতেও অনেকে তাকে উন্মাদ ভাবছেন। কে জানে, একদিন হয়তো তার হাত ধরেই মঙ্গলের পথে পা বাড়াবে মানুষ। ইলন মাস্কের কীর্তিগাঁথা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখে ফেলা যায় না। হাইপারলুপ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সোলার সিটি, তার প্রায় প্রতিটা উদ্যোগই ব্লকবাস্টার হিট। ধরতে গেলে তিনি এই পৃথিবীর মুকুটহীন বাদশাহ। আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের আইডল, আমাদের হোমো স্যাপিয়েন্স।
চিত্রসূত্র: গুগল
Comments (0)