মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের কথা। উত্তাল একাত্তরের কোন এক সময় পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিসহ এর আশেপাশের এলাকাতে শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে।
এই কটিয়াদি এলাকায় পাক আর্মি এবং রাজাকারদের ব্যাপক চলাচল থাকায় এই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর কোন ঘাঁটি স্থাপন সম্ভব হয়নি। একসময় মুক্তিবাহিনী এ এলাকায় তৎপরতা বৃদ্ধি করলে দলের নেতা হারুন-অর-রশিদ একরাতে জানতে পারেন পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর পাঁচটি সৈন্যবাহী লঞ্চ বেলাবো থেকে কটিয়াদি এসে অপেক্ষা করছে এবং পরদিন লঞ্চগুলো য... moreউত্তেজিত হয়ে "জয় বাংলা!" বলবেন না!
মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের কথা। উত্তাল একাত্তরের কোন এক সময় পাকিস্তান সৈন্যবাহিনী কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিসহ এর আশেপাশের এলাকাতে শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে।
এই কটিয়াদি এলাকায় পাক আর্মি এবং রাজাকারদের ব্যাপক চলাচল থাকায় এই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর কোন ঘাঁটি স্থাপন সম্ভব হয়নি। একসময় মুক্তিবাহিনী এ এলাকায় তৎপরতা বৃদ্ধি করলে দলের নেতা হারুন-অর-রশিদ একরাতে জানতে পারেন পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর পাঁচটি সৈন্যবাহী লঞ্চ বেলাবো থেকে কটিয়াদি এসে অপেক্ষা করছে এবং পরদিন লঞ্চগুলো যুদ্ধাস্ত্র, খাবার এবং আনুষঙ্গিক রশদ নিয়ে ঢাকা অথবা ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিবে। এ-সময় দলনেতার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে সাগরদী বাজারের নিকট অবস্থান গ্রহণ করে।
পরবর্তীতে তারা রামপুরা গ্রামের উত্তরপ্রান্তে ব্রহ্মপুত্রের বাঁকে পাকিস্থানী সৈন্যদের আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। দলপতি সবাইকে নির্দেশনা দেন, পাকবাহিনীর প্রথম লঞ্চ মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় দল অর্থাৎ শেষ সীমানায় না পৌছানো পর্যন্ত কেউ যেন আক্রমণ না করে।
পরদিন সকাল আটটার দিকে পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর প্রথম দুটি লঞ্চ মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানে প্রবেশ করে। দ্বিতীয় জোড়া লঞ্চ মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিতীয় বাহিনীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকালে হঠাৎ দলের সদস্য আফতাব উত্তেজিত হয়ে "জয় বাংলা" স্লোগান দিয়ে লঞ্চের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে সকল মুক্তিযোদ্ধা একযোগে গুলি চালান।
এতে সামনে দু'জোড়া লঞ্চই আক্রান্ত হয়, তবে পিছনের লঞ্চটি পিছু হটে রামপুরা বাজারের নিকট নদীর পশ্চিম তীরে পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীকে নামিয়ে দেয়। সৈন্যরা লঞ্চের ছাদে বালুর বস্তা দিয়ে তৈরীকৃত বাংকার থেকে এল.এম.জি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অবিরাম গুলি বর্ষন করতে থাকে। দলনেতা হারুন বুঝতে পারেন এ অবস্থায় সৈন্যবাহিনী সাথে সম্মুখ সমরে বেশীক্ষণ টিকে থাকা সম্ভব হবে না। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি দলকেই ফায়ারিং কাভার দিয়ে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসেন। দলনেতা হারুন কাটিয়াদির যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে চালাকচরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসেন।
মোদ্দাকথা, একটি দৃশ্যমান বিজয় সম্ভাবনা কিঞ্চিৎ উত্তেজনার ফলে পিছু হঠতে বাধ্য করলো! বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি কটিয়াদির যুদ্ধ নামেই অধীক স্মরনীয়।