বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার ও জাতীয় চার নেতা হত্যার ঘটনায় প্রথম অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয় যুক্তরাজ্যে, ১৯৮০ সালে। বাংলাদেশে আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী শন ম্যাকব্রাইডসহ চার ব্রিটিশ আইনবিদ মিলে এ কমিশন গঠন করেছিলেন। তবে অনুসন্ধানের কাজে এ কমিশনকে বাংলাদেশে ভিসা দেয়নি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার।
ওই অনুসন্ধান কমিশনের প্রতিবেদনটি শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি: প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব... moreবঙ্গবন্ধুও চার নেতার হত্যার প্রথম তদন্ত কমিটিঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবার ও জাতীয় চার নেতা হত্যার ঘটনায় প্রথম অনুসন্ধান কমিশন গঠিত হয় যুক্তরাজ্যে, ১৯৮০ সালে। বাংলাদেশে আইন করে বিচারের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী শন ম্যাকব্রাইডসহ চার ব্রিটিশ আইনবিদ মিলে এ কমিশন গঠন করেছিলেন। তবে অনুসন্ধানের কাজে এ কমিশনকে বাংলাদেশে ভিসা দেয়নি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার।
ওই অনুসন্ধান কমিশনের প্রতিবেদনটি শেখ মুজিব মার্ডার ইনকোয়ারি: প্রিলিমিনারি রিপোর্ট অব দ্য কমিশন অব ইনকোয়ারি শিরোনামে পুস্তিকা লন্ডনের র্যাডিক্যাল এশিয়া পাবলিকেশন্স থেকে ১৯৮২ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হয়। এর মুখবন্ধ লিখেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কমিশনের সদস্যঃ
এ কমিশন গঠিত হয় ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সের একটি কমিটির কক্ষে।
#সদস্য ছিলেন ব্রিটিশ এমপি ও আইনবিদ স্যার টমাস উইলিয়ামসন
#আয়ারল্যান্ড সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী শন ম্যাকব্রাইড,
#এবং ব্রিটিশ আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও পরিবেশবাদী আইনবিদ অবরি রোজ।
১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশে পাঠানো কমিশনের প্রতিবেদনও আমলে নেয় এই অনুসন্ধান কমিশন। ওই বছরের এপ্রিলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মিশনটির নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে গঠিত এ কমিশনেরই সদস্য শন ম্যাকব্রাইড।
#যুক্তরাজ্যের অনুসন্ধান কমিশন সার্বিক বিবেচনার পর তিনটি সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।
এক, এ হত্যাকাণ্ডের বিচারে আইন ও বিচারপ্রক্রিয়াকে যথাযথভাবে এগোতে দেওয়া হয়নি।
দুই, বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে সরকারই দায়ী।
তিন, হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রক্রিয়ার বাধাগুলো দূর করতে হবে এবং সেই সঙ্গে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে তার নিজ ধারায় অগ্রসর হতে দিতে হবে।
তদন্ত কমিশন ১৩ সামরিক কর্মকর্তা শনাক্তকরণঃ
বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যার ঘটনা অনুসন্ধানের পর এই কমিশন ১৩ সামরিক কর্মকর্তাকে শনাক্ত করে। তাঁদের নানাভাবে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দেয় ১৯৭৫ পরবর্তী সরকার।
কমিশন তিনটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং তা পর্যালোচনা করে। সেগুলো হলো,
বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার এবং জাতীয় চার নেতার হত্যাসংক্রান্ত কাগজপত্র;
জনসমক্ষে এসব হত্যার দায় স্বীকার করে যেসব ব্যক্তি বক্তব্য দিয়েছিলেন তাঁদের সংক্রান্ত
এবং এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের গ্রহণ করা পদক্ষেপগুলো। মোট ২০টি অনুচ্ছেদে এ প্রতিবেদনের মূল বক্তব্য তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের মোট ২২ সদস্য নিহত হন। তাঁদের মধ্যে চার বছরের একটি মেয়ে ও তিন বছরের এক ছেলে ছিল। কয়েকজন অতিথি এবং এসব পরিবারের আত্মীয়েরাও ছিলেন। সেনাবাহিনীর একটি ছোট গ্রুপ এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
প্রতিবেদনে লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ এবং মেজর শরিফুল হক ডালিমকে সামরিক অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাঁদের মধ্যে ফারুক ও রশিদ ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংককে থাকার সময় কর্নেল ফারুক এক সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাঁর পরিবার এবং জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। ১৯৭৬ সালের ৩০ মে লন্ডনের সানডে টাইমসে এবং ওই বছরের ২ আগস্ট লন্ডনে টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন ফারুক।
বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত আরও যেসব সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দেওয়া হয়, এর একটি তালিকা দেওয়া হয় প্রতিবেদনে। তাঁদের মধ্যে আছেন
১. লে. কর্নেল আজিজ পাশা ২. মেজর মুহিউদ্দিন আহমেদ ৩. মেজর শাহরিয়ার রশীদ খান ৪. মেজর বজলুল হুদা ৫. মেজর এ এম রাশেদ চৌধুরী ৬. মেজর এস এইচ এম বি নূর চৌধূরী ৭. মেজর শরিফুল হোসেন ৮. ক্যাপ্টেন কিশমত হোসেন ৯. লেফটেন্যান্ট এম খায়রুজ্জামান ১০. লেফটেন্যান্ট আব্দুল মাজেদ।