কিছু বিখ্যাত মানুষের ঘুম
কেউ মগ্ন হয়ে এমনই কাজ করেন যে ২-৩ দিন নির্ঘুম থাকেন, কেউ সারা রাতে দু’চোখের পাতা এক করেন মাত্র ২ ঘন্টার জন্য, কাউকে ১০-১১ ঘন্টা অবলীলায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে রিপ ভ্যান উইংকেলের কথা মনে পড়ে যায়, কেউ আবার বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে সেরে নেন ভাতঘুমটুকুও – এইরকম সব অতিমানবীয় ঘুমের কথা শোনাই এবার, তাও কিছু বিখ্যাত মানুষ প্রসঙ্গে।
স্যার আইজাক নিউটন
প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা ঘুম হলেই নাকি হয়ে যেত নিউটনের। শোনা যায় তিনি এতটাই পরিশ্রম করতেন যে, মাঝে মাঝে কয়েকদিন ধরে এক ফোঁটাও ঘুমাতেন না। অ... moreকিছু বিখ্যাত মানুষের ঘুম
কেউ মগ্ন হয়ে এমনই কাজ করেন যে ২-৩ দিন নির্ঘুম থাকেন, কেউ সারা রাতে দু’চোখের পাতা এক করেন মাত্র ২ ঘন্টার জন্য, কাউকে ১০-১১ ঘন্টা অবলীলায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে রিপ ভ্যান উইংকেলের কথা মনে পড়ে যায়, কেউ আবার বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে সেরে নেন ভাতঘুমটুকুও – এইরকম সব অতিমানবীয় ঘুমের কথা শোনাই এবার, তাও কিছু বিখ্যাত মানুষ প্রসঙ্গে।
স্যার আইজাক নিউটন
প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা ঘুম হলেই নাকি হয়ে যেত নিউটনের। শোনা যায় তিনি এতটাই পরিশ্রম করতেন যে, মাঝে মাঝে কয়েকদিন ধরে এক ফোঁটাও ঘুমাতেন না। অবশ্য তার পরিণাম হত মারাত্মক। তিনি মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। কিছুটা হালকা চালে বলা হয় যে, তাঁর মাথায় মাধ্যাকর্ষণ সংক্রান্ত তথ্য-সহ এত গবেষণামূলক ভাবনার ঘোরাফেরা ছিল যে, বেচারি ঘুম যেন পালিয়ে বাঁচত। তিনি ৮৪ বছর বয়সে মারা যান।
নেপোলিয়ান বোনাপার্ট
রাত ১২টায় ঘুমাতে গিয়ে নাকি ২ ঘন্টা বাদে উঠে পড়তেন নেপোলিয়ান। তার পরে আবার ভোর ৫টায় শুয়ে বিছানা ছাড়তেন সকাল ৭টা নাগাদ। অর্থাৎ সাকুল্যে সারা রাতে তিনি ঘুমাতেন মোটা ৪ ঘন্টা। অথচ নেপোলিয়ন সংক্রান্ত কয়েকটি লেখায় দাবী করা হয়েছে যে তিনি রাতে ৬ ঘন্টা ঘুমানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁর কয়েকজন সেনাপতির কাছ থেকে জানা গেছে যে, দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলাকালীন নেপোলিয়ান এক অদ্ভুত ক্ষমতাবলে যুদ্ধক্ষেত্রেই আধঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে নিতে পারতেন। এই সময়ে যুদ্ধের ভার অধঃস্তনদের ওপর ছেড়ে দিয়ে তিনি নির্দেশ দিতেন যে এই আধঘন্টায় যেন তাঁকে কোনও অবস্থাতেই বিরক্ত করা না হয়। গবেষকদের ধারনা তিনি ঘুম-ঘাটতি বা স্লিপ ডিপ্রাইভেশনে ভুগতেন এবং কারও কারও মতে ওয়াটারলুর যুদ্ধে তাঁর পরাজয়ের পিছনে ছিল এই ঘুমজনিত শারীরিক অসুস্থতা। যদিও এমনটা শোনা যায় যে, সেন্ট হেলেনায় থাকাকীলন তিনি স্বাভাবিক মানুষের মতোই ঘুমাতেন। নেপোলিয়ন ৫২ বছর বেঁচে ছিলেন।
বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন
‘আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ, মেকস এ ম্যান হেলদি, ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ’ – এই বিখ্যাত প্রবচনের সৃষ্টিকর্তা বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন সম্পর্কে কয়েকটি সূত্রের দাবী যে তিনি নিজে রাতে মাত্র ২-৪ ঘন্টা ঘুমোতেন। আসলে তিনি যে-সময়ের মানুষ তখন কঠোর পরিশ্রম করতে পারার ক্ষমতাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক গুণ বলে মনে করা হত। অপর প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক থমাস এডিসনকেও ফ্র্যাঙ্কলিন নির্দেশিত পথে চলতে দেখা গেছে। উভয়ের ক্ষেত্রেই এটা প্রমাণ করার দায় ছিল যে তাঁরা খুব বেশি আরাম-বিলাস করেন না। নিজের আত্মজীবনীতেও ফ্র্যাঙ্কলিন মানুষের নৈতিক উত্কর্ষতা প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে রাতে ৪ ঘন্টা ঘুমানোর সুপারিশ করেছেন। ‘কবরে অনেক ঘুমানোর সময় পাওয়া যাবে’ – এই ছিল তাঁর পরিচিত শ্লোগান। তিনি ৮৪ বছর বাঁচেন।
থমাস এডিসন
এই মহান বিজ্ঞানী নিজেই জানিয়েছেন যে তিনি রাতে ৫ ঘন্টারও কম ঘুমাতেন। শোনা যায় গবেষণাগারে তিনি এতটাই মগ্ন হয়ে কাজ করতেন যে প্রকৃত অর্থে কয়েক দিন ধরে তাঁর প্রায় ঘুমই হত না। কখনও কখনও গবেষণাগারে রাখা ছোট একটি খাটে কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে তিনি আবার নতুন উদ্যমে কাজে লেগে যেতেন। আবার এমনও শোনা যায়, কখনও কখনও তিনি নাকি প্রায় সারা দিন ধরেই ঘুমাতেন। এডিসন মনে করতেন যে অধিকাংশ মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খান এবং বেশি ঘুমান। আর এই অপরিমিত কুঅভ্যাসের কারণে তাঁদের স্বাস্থ্য খারাপ হয় এবং তাঁরা দক্ষতা হারান। ৮৪ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
উইনস্টন চার্চিল
এই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ তাঁর ৯১ বছরের জীবদ্দশায় রাতে গড়ে মাত্র ৫ ঘন্টা করে ঘুমালেও দিনে নিয়মিত ভাতঘুম দিয়ে ঘাটতি পূরণ করে নিতেন। মোটামুটি ১.৫ থেকে ২ ঘন্টার দিবানিদ্রা দিতেন তিনি। সাধারণত প্রতিরাতে ৩টের সময় শুতে গিয়ে সকাল ৮টা নাগাদ ঘুম থেকে জেগে তিনি বিছানায় বসেই খবরের কাগজ পড়তেন, চিঠি ডিকটেশন দিতেন কিংবা ফাইলে সই করতেন। তাঁর শোবার ঘরে ছিল দুটি বিছানা। কোনও একটি বিছানায় ঘুম না এলে তিনি বিছানা পাল্টে অন্যটায় গিয়ে শুতেন। ঘুম নিয়ে তিনি বেশ মজার কথা বলতেন। তাঁর কথায়, দিবানিদ্রাতে সময় নষ্ট, এটি কিছু কল্পনাহীন মানুষের বোকা বোকা ধারণা। সময় নষ্টের তো প্রশ্নই নেই বরং দিবানিদ্রা দিলে বেশি কাজ করা যায়। তাঁর মতে দুপুরে ঘুমিয়ে তিনি একদিনে দুদিনের কাজ না করতে পারলেও অন্তত দেড় দিনের কাজ তো করেনই।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন
শোনা যায় অ্যালবার্ট আইনস্টাইন সাধারণত রাতে ১০ ঘন্টা ঘুমোতেন। তবে তিনি যদি কোনও গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন তবে সে ঘুম আরও বেড়ে গিয়ে হত ১১ ঘন্টা। তিনি দাবী করতেন যে তাঁর বহু আবিষ্কারের সঙ্গে নাকি রাতে দেখা স্বপ্নের সম্পর্ক আছে। আইনস্টাইন এটাও মনে করতেন যে দিবানিদ্রা মনকে তাজা করে এবং এই দিবানিদ্রাই তাঁকে আরও সৃজনশীল করে তুলতে সাহায্য করেছে। তিনি ৭৬ বছর বেঁচেছিলেন।
জন এফ কেনেডি
মাঝ দুপুরে সাঁতার এবং অনেকটা এক্সাসাইজ করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বিছানায় বসেই দুপুরের খাওয়া সেরে নিতেন এবং পরে খুব দ্রুত ১-২ ঘন্টার একটা নিটোল ভাতঘুম দিতেন। কোনও অতি জরুরি ব্যাপার ছাড়া তাঁকে যাতে বিরক্ত করা না হয় ঘনিষ্ঠ মহলে এমনই নির্দেশ দেওয়া ছিল। যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাকুক, স্ত্রী জ্যাকি কিন্তু এই সময় তাঁকে সঙ্গ দিতেন। এই সময় ঘরের দরজা বন্ধ থাকত, টেলিফোন ধরা হত না, কোনও ফাইল পাঠানো যেত না, এমন কী তটস্থ হয়ে কোনও কারণেই কেউ সিঁড়ি দিয়ে ওপরে পর্যন্ত উঠতেন না। ঘুম থেকে জেগে কেনেডি দ্বিতীয়বারের জন্য গরম জলে স্নান করে বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে কাজ শুরু করতেন। #collected