শৈশব কৈশরের দিন গুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে

 
আজ কয়দিন ধরে ফেলে আসা শৈশবের দিনগুলির কথা খুব মনে পড়ছে।অল্পতেই মন অস্থির হয়ে যাচ্ছে। কেন অস্থির হয়ে আছে সেটা বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যতই দিন যাচ্ছে মনে হচ্ছে ততোই জীবনটা একটু একটু করে জটিল হচ্ছে। আমার দুরন্ত শৈশবের কথা মনে পরলে মাঝে মাঝে মনে হয় কেন বড় হলাম। ছোট থাকাই ভাল ছিল।
 

আজকাল শৈশব কৈশরের কথা মনে করে ভীষন হিংসা হয়। সেই উদ্দাম দুরন্ত দিনগুলোকে ফিরে পেতে মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সেটা এমন একটা সময় ছিল,যখন গভীর চিন্তাভাবনা ছাড়াই কোন কিছু করে ফেলা যেত। আর এখন কোন কিছু করার আগে দশ দিক ভাবতে হয়।

আমার শৈশব কৈশরের দিনগুলো কেটেছে গ্রামে। একদম শৈশবের দিনগুলো কেটেছে ফুফুর সাথে এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে। ফুফু যত স্কুলে বদলি হতেন আমার ও যেন বদলি হত। ক্লাস সিক্সের পর থেকে দাদার অধীনে উপজেলার স্কুল। বাবা সরকারী চাকরী করায় বাবার শাসন ও আদর ভাগ্যে দুটাই কম জুটেছে। স্কুলের জীবনের অনেক কিছুই আজ মনে উকি মারে। জীবনের প্রথম মঞ্চে অভিনয়, কবিতা আবৃত্তি আর বিতর্ক।। পুরস্কার পাওয়ার নেশাটা কলেজ জীবন পর্যন্ত খুব বেশি আমাকে তাড়া করত। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় চতুর্থ বিষয়ের ক্লাস ফাকি দিয়ে নদীর ধারের গাছে চড়ে কত সব প্রতিযোগিতা। খেলাধুলায় একদম কাঁচা থাকায় ক্রিকেট খেলায় সবসময় আতিরক্ত খেলোয়াড়ের তালিকায় শেষ নামটা আমারই থাকত।

প্রথম প্রথম স্কুলে আমি আমার আপু আর আপুর বান্ধবীরা দল বেধে অনেকটা পথ হেটে স্কুলে আসতাম। আপুদের কাছ থেকে কত দুই টাকার নোট ধার নিয়েছি রাস্তার পাশের ভাজা পিয়াজু-সমুচা খাওয়ার জন্য তার কোন ডাটা আমার কাছে নেই। সবার আদরে নামকরা বাঁদরেই ছিলাম। ক্লাস এইটে এসে ভাগ্যে একটা বাইসাইকেল জোটেছিল। দেশে থাকার সময় গ্রামে গেলে সেই বাইসাইকেলটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম অনেক অত্যাচার করেছি সাইকেলটিকে।

ক্লাস নাইনে উঠে হঠাৎ করে কলম খেলার একটা ঝোক আসলো সবার মধ্যে। স্কুল লাইফে কলম খেলার সাথে পরিচয় হয়নি এমন মানুষ মনে হয় কমই আছে। তারপরও যাদের সেই খেলার সাথে পরিচয় নেই তাদের জন্য বলি, এই খেলার নিয়ম হল টেবিলের উপর কয়েকজন মিলে নিজের কলম নিয়ে অনেকটা ক্যারম খেলার স্টাইলে ফাইট করতে থাকবে। যার কলম শেষ পর্যন্ত টেবিলে থাকবে সে বিজয়ী। হঠাৎ করে কেন এইখেলার নেশা সবার মধ্যে উদয় হল তা কে জানে। আমাদের ক্লাস শুরু হত সকাল ১০টা থেকে। আমরা ৯টার মধ্যে স্কুলে গিয়ে স্যারের টেবিলে কলম নিয়ে হাজির। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে টেবিলে জায়গা বরাদ্দ চলতো।

ক্লাস নাইনে থাকতে তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া প্রাইজবন্ড গুলো আজও আগলে রেখেছি। গ্রামের বাড়ি গিয়ে পুরষ্কারের বই গুলো নিয়ে খেলা করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু গ্রামে যাওয়া হয়নি তাও অনেক দিন হল।

আমার কৈশরের দিনগুলো কেটেছে প্রাণের শহর ময়মনসিংহে। মাধ্যমিক পাশ করেই জেলার সেরা কলেজ কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম। ছাত্রাবাসে/মেসে থেকেছি ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর পূর্ব পর্যন্ত। কলেজ জীবন অল্প কয়েক বছরের হলেও স্মৃতির পাতায় অনেক কিছুই জমে আছে।
লিখতে বসে হাজার হাজার ছোট ছোট ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। কিছু ঘটনা অনেক মজার কিন্তু বলা যাচ্ছে না। সবকিছু লিখতে গেলে হয়ত মাসের পর মাস চলে যাবে তারপরও মনে হবে ওহ ওইটা তো বলা হল না।


আজ নিজের সংসার হয়েছে। স্ত্রী পরিবার সবাইকে নিয়ে প্রবাসে অনেক ভাল আছি। অর্জনের খাতায় জমা হয়েছে কিছু অর্জন। নিজের ব্যাবসা, ষ্টার্ট আপ, কমিউনিটি- সামাজিক কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাই প্রতিনিয়ত। সারা দিন কাজ সেরে মনে হয় এখনও হাজারটা কাজ বাকি।  তবু  বার বার সেই শৈশব কৈশরের দিন গুলোতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।।

Posted in Personal Blogs on July 21 2020 at 01:32 AM

Comments (1)

No login
color_lens
gif