ইন্সপায়ারিং বাংলাদেশ সামিট ২০২০
#বুক_রিভিউ
বইয়ের নামঃ অসমাপ্ত আত্নজীবনী
লেখকের নামঃশেখ মুজিবুর রহমান
প্রচ্ছদঃ সমর মজুমদার
প্রকাশকালঃ১৮ জুন,২০১২
লেখার সময়কালঃ ১৯৬৬-১৯৬৯
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৩২৯
ছবিঃ সংগৃহীত
নামঃ মোছাঃসুমানা হক তুলি
প্রতিষ্ঠানঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইলঃ abirhdipto2003@gmail.com
তীব্র ক্ষুধায় এক মুঠো খাবার দেখলে যেমন চোখ চকচক করে ওঠে ঠিক তেমনি একটি পাঠের অসাধারণ প্রতিক্রিয়াও ক্ষুধার্ত পাঠকের মন কেড়ে নেয়।
এক অপরাজেয় ব্যক্তিত্বের জীবন্ত উপাখ্যান।গ্রন্থটির ভূমিকা লেখেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
"Sincerity of purpose and honesty of purpose".পিতার এই উপদেশকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন বলেই এক গরীব বৃদ্ধার কুঁড়েঘরেও তিনি স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
"বই আর কাগজ পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে চোখ দুইটাও ব্যথা হয়ে যায়।"বন্ধুবান্ধব ও সহধর্মীনির অনুরোধ আর নির্জন কারাপ্রকোষ্ঠের একাকিত্ব ঘোচাতেই হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন।লিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন নিজের জীবনের খন্ডাংশ "অসমাপ্ত আত্নজীবনী"।৩২৯ পৃষ্ঠা সম্বলিত গ্রন্থটির পাতায় পাতায় রয়েছে একজন খাঁটি দেশপ্রমিকের আত্নত্যাগের হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা।গ্রন্থটিতে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটনাবলী স্থান পেয়েছে। এত সহজ-সরল,সাবলীল ভাষায় রচিত একটি দৃঢ় ও সংগ্রামী জীবনের খন্ডাংশ কীভাবে অগণিত পাঠকের মন কেড়ে নেয় তা আমার মনে অপার বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
বাইগার নদীর তীরে অবস্থিত টুঙ্গীপাড়ার এক টিনের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর জনগণের অন্তপ্রাণ হয়ে ওঠার গল্পই হল অসমাপ্ত আত্নজীবনী।গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম,তাঁর বংশ পরিচয়,বাল্যকালের নানা খুঁনসুঁটি,যৌবনের অস্থিরচিত্ততা,রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ,রাজনৈতিক কার্যাবলী,রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ প্রভৃতি বিষয়াবলী উঠে এসেছে।গ্রন্থটিকে যদি শুধুই একটি আত্নজীবনী বলে ক্ষান্ত থাকি তবে গ্রন্থটির প্রতি অবিচার করা হবে।এক মহান নেতার আত্নজীবনীর পাশাপাশি এটি ইতিহাসের কতিপয় জ্বলন্ত ঘটনার(১৯৪৬ সালের পাকিস্তান দাবীর নির্বাচন,পূর্ববঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন,আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন,১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন,১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন) প্রত্যক্ষ সাক্ষী আর সেই সাথে রয়েছে কিছু জ্বলন্ত নক্ষত্রের(হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী,মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী,শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক)অনবদ্য অবদানের কথা।যার হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ তিনি হলেন বাংলার মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।লেখক এই মহান নেতার সাহচর্য পাবার কথা এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যে তা আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।জীবনের যে সময়ে আত্নকেন্দ্রিক হবার কথা,নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার কথা সেই সময় থেকেই এই মহান নেতার মনে স্থান করে নিয়েছিল প্রদেশ আর জনগণের স্বাধীনতার চিন্তা।এক অপরাজেয় ব্যক্তিত্ব;সময়সাপেক্ষে যার প্রয়োজনীয় ভূমিকায় নিজেকে বদলে নেওয়ার জাদুকরী ক্ষমতা ছিল।দুর্ভিক্ষ(১৯৪৩) ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাচলাকালীন তাঁর ভূমিকা উপরোক্ত গুণেরই পরিচায়ক।ছাত্র রাজনীতি কিংবা দলীয় রাজনীতি দু’ক্ষেত্রেই তাঁর সমান জনপ্রিয়তা ছিল।যৌবনের অধিকাংশ সময় কারাপ্রকোষ্ঠের নির্জনে কাটলেও জনগণের অন্তপ্রাণ মানুষটি ছিলেন আপোষহীন,নির্ভীক।গ্রেপ্তার হলে হাসিমুখে বলতেন,"এই তো আমার পথ।"আদর্শ ও নীতির প্রশ্নে এমনই অটল ছিলেন যে তার পরিপন্থী হলে নিজ দল ও নেতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও কুণ্ঠিত হতেন না।রাজনৈতিক ঘটনার পাশাপাশি ভ্রমনলিপ্সা ও জিজ্ঞাসু মন তাঁর ব্যক্তিত্বে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।শান্তি সম্মেলনে যাত্রাকালে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের বর্ণনা, দিল্লীর বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের বিশেষ করে তাজমহল দর্শনের অভিজ্ঞতা তিনি এমনই শৈল্পিকভাবে বর্ণনা করেছেন যে তা পাঠককে মোহিত করে রাখে।
বইটির ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন,"আল্লাহর তরফ থেকে ঐশ্বরিক অভয়বাণী এসে পৌঁছাল আমার কাছে।"এই কথা থেকে অনুধাবন করা যায় বইটির গুরুত্ব কতখানি।
Comments (1)