প্রাণিকল্যাণ আইন- কুকুর-বিড়াল নিয়ে মামলা করলে ‘মানুষ হাসে’

প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধে ২০১৯ সালে নতুন আইন করেছে সরকার। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আইনটির প্রয়োগ কম। শত বছরের পুরোনো আইন বাতিল করে প্রাণীর কল্যাণে নতুন একটি আইন করেছে সরকার। শিরোনাম ‘প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯’। যদিও প্রাণী রক্ষায় আইনটি তেমন একটা কাজে আসছে না।

প্রাণী নিয়ে কাজ করে, এমন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, আইন প্রণয়নের পরও এ পর্যন্ত ১০টির মতো মামলা হয়েছে। ঘটনা বেশি হলেও মামলার সংখ্যা এত কম হওয়ার বড় কারণ সরকার আইনটি নিয়ে তেমন প্রচারণা চালায়নি। ফলে এই আইন সম্পর্কে অনেকে জানেন না। এ ছাড়া আইনের প্রয়োগ নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা। আর যাঁরা প্রাণীর ওপর নিষ্ঠুরতা নিয়ে মামলা করতে যান, তাঁদের বিদ্রূপের শিকার হতে হয়। মানুষ হাসাহাসি করে।

প্রাণীর প্রতি নৃশংসতার ঘটনা নতুন নয়। তবে ২০১৯ সালের মার্চে রাজধানীর গোপীবাগের একটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ভিন্নমাত্রা পায়। ঘটনাটি হলো, একটি বিড়াল হত্যা করে প্রাণীটির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার পর তা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছিল। গোপীবাগের ওই ঘটনাটি যখন ঘটে তখনো নতুন প্রাণিকল্যাণ আইন হয়নি। আইনটি হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে।

‘দ্য ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেলস অ্যাক্ট ১৯২০’ বাতিল করে ২০১৯ সালে প্রাণিকল্যাণ আইন প্রণয়ন করে সরকার। এই আইনে প্রাণী বলতে মানুষ ছাড়া সব স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, সরীসৃপজাতীয় প্রাণী, মাছ ছাড়া অন্যান্য জলজ প্রাণী এবং সরকারি গেজেট-প্রজ্ঞাপনে ঘোষিত অন্য প্রাণীকে বোঝাবে। আইনে ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তাঁর কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ওই অধিদপ্তরের কোনো ভেটেরিনারি সার্জনকে বোঝানো হয়েছে। আর ‘স্থানীয় কর্তৃপক্ষ’ বলতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডকে বোঝানো হয়েছে।

এ আইনে সাজা হিসেবে অনধিক ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথা বলা আছে। সর্বোচ্চ সাজা অনধিক দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য। উল্লেখ্য, অ-আমলযোগ্য অপরাধ বলতে সেসব অপরাধকে বোঝায়, যা সংঘটিত হওয়ার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করতে হয়। বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না।

এদিকে প্রাণিকল্যাণ আইনে বলা আছে, এ আইনের অধীন অপরাধের বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতেও (মোবাইল কোর্ট) হবে। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের আওতায় আইনটি এখনো তফসিলভুক্ত হয়নি।

বিচার পাওয়া ‘সহজ নয়’

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রাণিচিকিৎসক মো. আব্দুল্লাহিল কাফি। তাঁর দুটি মামলা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আলমডাঙ্গার সোনাতনপুর গ্রামে ১০টি কুকুর হত্যার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় বাসিন্দা আব্বাস আলীর (৪৫) বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়, আব্বাস আলী পাউরুটিতে বিষ মিশিয়ে মালিকবিহীন ও প্রতিবেশীদের ১০টি কুকুর হত্যা করেন। তিনি বলেন, এ মামলার তদন্তের নির্দেশ পেয়ে তদন্ত শুরুর পর আসামি তাঁর কাছে এসে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। এ মামলার শুনানি আগামী ১৪ জুন। উল্লেখ্য, এ মামলারও বাদী ঢাকার মারুফুল হক।

আব্দুল্লাহিল কাফি আরও বলেন, প্রাণিকল্যাণ আইনে মামলা করার বড় প্রতিবন্ধকতা ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার করতে না পারা। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিচার হলে মানুষ সহজে বিচার পেতেন। মানুষকে সচেতন করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন।

রাজধানীর ধলপুরে গত বছরের জানুয়ারিতে রড, সাঁড়াশি ও প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে প্রায় ২০টি কুকুর হত্যা করে বস্তায় ভরে নিয়ে যান চার ব্যক্তি। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে মামলার আসামিদের শনাক্ত করা হয়। তদন্তে চার আসামির মধ্যে একজনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। দুজন জামিনে আছেন। এ ছাড়া একজনের নামে এখনো সমন জারি আছে।

মামলাটির বাদী ঢাকার ব্যবসায়ী মারুফুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি নিয়ে তিনি প্রথমে যাত্রাবাড়ী থানায় যান। তখন পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে লিপিবদ্ধ করে। জিডির পর আসামিরা হুমকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন। পরে থানা থেকেই আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

Source: https://www.prothomalo.com/bangladesh/

 
Posted in Pet Blogs on May 14 2022 at 12:19 PM

Comments (0)

No login
color_lens
gif