অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫০ বছরে ২০২১ সালে বাংলাদেশ পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়।
মোট দেশজ উৎপাদন ও মাথা পিছু আয়ের পর অর্থনীতিতেও পাকিস্তানের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে বাংলাদেশ। সবকিছুই হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ২০৪১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হবে। দেশের মানুষের গড় আয় আরও বাড়বে।
পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, বিআরটিসহ বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শিল্প বিপ্লব হবে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতি গত ৫০ বছরে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
২০৪১ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে হলে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পরিসংখ্যান বলছে, গেলো ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪টিতে। যেখানে পাকিস্তানের বেসরকারি ব্যাংক মাত্র ২২টি। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ২ হাজার ৬৪ ডলার। পাকিস্তানের মানুষের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ১৩০ ডলার।
দেশের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার উদ্যোগের অভাবনীয় সাফল্য হয়েছে। মোবাইল ফোনে বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে সেবা পাচ্ছেন ৩ কোটি ২৪ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহক।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২ শতাংশ। পাকিস্তানের জিডিপির প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ৪ ডলার। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর আর পাকিস্তানে ৬৭ বছর। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার বাংলাদেশে হাজারে ২৫ জন, পাকিস্তানে প্রতি হাজারে মারা যায় ৫৯ জন। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব শেষ করছে ৯৮ শতাংশ শিশু, পাকিস্তানে ৭২ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক পরামর্শ সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের (সিইবিআর) ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল (ডব্লিউইএলটি)’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে জিডিপির আকারের ভিত্তিতে বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় ৪১তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের অবস্থান ৪৪তম।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং বা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, আগামী ১৫ বছরে ৭ শতাংশ বা আরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনও সম্ভব। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ দ্রুত অবকাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমান সরকার আগামী ৫ বছর ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে এশিয়ার পঞ্চম টাইগারে পরিণত হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক বেশি। আমারা গত ১০ বছর করোনার আগ পর্যন্ত অসাধারণ গতিশীলতায় এগিয়েছি। ১৯৬০ থেকে ’৯০ সাল পর্যন্ত চারটি দেশকে এশিয়ান টাইগার ধরা হয়। তারা ৬, ৭, ৮ এই অনুপাতে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আর আমরা একই ধারাবাহিকতায় ৬, ৭, ৮-এ চলে গেছি। আমরা যদি আর ৫ বছর থাকি তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা পঞ্চম এশিয়ান টাইগার হিসেবে আসতে পারবো।
Comments (0)