গেল ২৬ মার্চ বাংলাদেশ পা রাখল ৫০ বছর বয়সে। এই সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের সকল অর্জন, ব্যর্থতা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি হিসাব করলে দেখা যাবে, ৫০ বছরের এই সুদীর্ঘ রাস্তা বরাবরেই মতই কঠিন ছিল। এবং আজও বাংলাদেশ শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছে, আর নিজের শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ কতটুকু দুর্নীতি রুখতে পেরেছে?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রথম ধাপটা শুরু হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সর্বশেষে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ বাংলাদেশের জন্ম হয়। এরপর বাংলাদেশকে আর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে নি। একটু একটু প্রতিটা সেক্টরে বাংলাদেশ সফলতার ছাপ রেখে যাচ্ছে। হেনরী কিসিঞ্জারের "তলাবিহীন ঝুড়ি" এখন খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে রেমিটেন্সে ঈর্ষনীয় সাফল্য লাভ করছে।
কিন্তু এতকিছুর পরেও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার পরিপূর্ণ মূল্যায়ন হচ্ছেনা। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধারা ধুঁকে ধুঁকে মরছে। মেকি মুক্তিযোদ্ধাদের ভিড়ে আসল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাপ্য সম্মানটা পাচ্ছেনা। ক্ষমতা আর টাকার খেলার কাছে সবাই জিম্মি, বোবা, এবং ভয়ার্ত। ক্ষমতাবানরা টাকার গদিতে বসে শাসন চালিয়ে যায়, ওদিকে নিম্নবিত্তেরা পেট চালানোর জন্য মহামারীতে রাস্তায় নামলে বেধড়ক মার খায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতির কবলে বহু আবরার অকালে মরে যায়।
খবরের কাগজ, ইন্টারনেট সর্বত্র নারী নির্যাতনের খবর। প্রতিদিন যে কয়টা নারী নির্যাতনের খবর আসে, বাস্তবে তার সিকিভাগেরও বিচার হয় না। নামীদামী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার নামে চলে দুর্নীতি, কিন্তু এর কোন সুরাহা নেই। সরকারী হাসপাতালগুলোতে রোগীরা চরম দুর্ভোগ আর হয়রানির শিকার হয়। করোনা মহামারীতে পুরো বাংলাদেশ দৌড়ালেও থেমে থাকে বেকার যুবকরা। কারণ তাদের বয়স বাড়ে ঠিকই, কিন্তু চাকরির পরীক্ষাগুলো বারবার পিছায়।
প্রতিনিয়ত দুর্নীতি, অবিচারে নাভিশ্বাস উঠা আমরা ঠিকই বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে যাই। আজও যখন ক্রিকেটে বা ফুটবলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা কোন অর্জন ছিনিয়ে আনে, তখন সেটা আমাদের সমস্ত দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। বিদেশে যখন বাংলাদেশ জয়ী হয়, তখন সমগ্র বাংলাদেশের মাথা গর্বে উঁচু হয়ে যায়। দেশের মধ্যেই যখন কেউ অন্যায়ের দৃঢ় প্রতিবাদ করে, তখন আমরা আশার আলো দেখতে পাই, ভাবি যে সুদিন আসছে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন বাংলাদেশ সমস্ত জঞ্জাল ফেলে বিশ্বের দরবারে উন্নত দেশগুলোর কাতারে সগর্বে জায়গা করে নিবে।
স্বাধীনতার আগামী ৫০ বছরে এই আমাদের প্রত্যাশা।
Comments (0)